দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বাড়লেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানে (এনবিএফআই)। গত বছরের শেষে তিন মাসে ব্যাংক খাতে প্রায় ৬১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ বেড়েছে। তবে এ সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক হাজার ৭৪ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ কমেছে। যদিও বছরের ব্যবধানে খেলাপি ঋণ বেড়েছে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, প্রতি বছরের ডিসেম্বর প্রান্তিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায় ও পুনঃতফসিল বেশি করে থাকে। কারণ, এসব প্রতিষ্ঠানে ডিসেম্বরকেন্দ্রিক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি হয়। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন এনে ঋণ আদায়ের কার্যক্রম জোরদার করেছে। ফলে খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে।
তবে এটি এখনো মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই হার আরো কমাতে হলে ব্যাপক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী করা, ঋণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় জবাবদিহি বৃদ্ধি করা।
তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা খেলাপি, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ। এটি আগের প্রান্তিক, অর্থাৎ ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫.৫২ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ২১ হাজার ৫৬৭ কোটি টাকা, যা ওই সময়ের মোট ঋণের ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।
আর্থিক খাতের বহুল আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যে অনিয়ম করে গেছেন, তার জের পুরো খাতকেই টানতে হচ্ছে। পি কে হালদারের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় ছিল- এমন কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই এখন খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান সাংবাদিকদের বলেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবই যে খারাপ তা নয়। কিছু কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা অনেক ভালো। তারা ভালো ব্যবসা করছে। ঋণ আদায়ের হারও ঊর্ধ্বমুখী। তারপরও আর্থিক খাতের ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। এ খাতটিকেও নতুন করে সাজাতে হবে। এখন আমরা ব্যাংক রেজুলেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে ব্যাংক সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছি। একই ধারায় আর্থিক প্রতিষ্ঠাগুলোতেও সংস্কারকাজ শুরু হবে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস