অপারেটরদের নানান শর্তের জাল, স্বল্প মেয়াদ আর অসংখ্য প্যাকেজের চক্রে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা দীর্ঘদিন ধরেই চরম ত্যাক্ত—বিরক্ত। তাই গ্রাহকদের সুবিধা বিবেচনা করে নতুন ডাটা প্যাকেজ নির্ধারণ করে নির্দেশিকা দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, তিন ও ১৫ দিন মেয়াদের ডাটা প্যাকেজ বাতিল করে সর্বনিম্ন মেয়াদ ৭ দিন, ৩০ দিন এবং আনলিমিটেড প্যাকেজ রাখা হয়েছে। তবে ব্যবহারকারীরা এখন তিন দিনের ডাটা প্যাকেজ সাত দিন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া ডাটা প্যাকেজের সংখ্যা ৯৫ থেকে কমিয়ে ৪০টি করা হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ওই নির্দেশিকা কার্যকর হবে।
রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবনের প্রধান সম্মেলন কক্ষে বিভিন্ন প্যাকেজের নতুন এ নির্দেশিকার উদ্বোধন করেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, তিন দিনের মেয়াদে ১৫ জিবি ডাটা দিলে তা গ্রাহকের উপকারে আসে না। মোবাইল অপারেটরগুলো ব্যবসায়িক স্বার্থে ডাটার মেয়াদ সীমিত রাখতে চায়। গ্রাহকের স্বার্থ বিবেচনায় ইন্টারনেট ডাটার নতুন প্যাকেজ তৈরি করা হয়েছে। ভবিষ্যতে গ্রাহকের সুবিধা বিবেচনায় প্রয়োজনে আবারও এই প্যাকেজের পরিবর্তন হতে পারে।
মোস্তফা জব্বার বলেন, আগে অসংখ্য প্যাকেজ থাকায় জনগণ বিভ্রান্তিতে পড়েছে। নতুন নির্দেশিকায় ৪০টি প্যাকেজ গ্রাহকদের স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। বর্তমানে ৩ দিনের প্যাকেজের যে মেয়াদ সেটাই ৭ দিনের মেয়াদ হবে। ‘অতিরিক্ত বা বাড়তি মুনাফা’ করতেই মোবাইল অপারেটররা ‘মেয়াদের চক্র’ গড়ে তুলেছে অভিযোগ করে মোস্তাফা জব্বার বলেন, এই মনোভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কারণ গ্রাহকরা এখন অনেক সচেতন। এই চক্র ভেঙে দিতে প্রয়োজনে আগামীতে ডেটার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন দাম বেঁধে দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে কমিশনের মহাপরিচালক (সিস্টেমস অ্যান্ড সার্ভিসেস) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাসিম পারভেজ নতুন প্যাকেজ নির্দেশিকা তুলে ধরে বলেন, প্রতিটি অপারেটর তিনটি ভিন্ন ভলিউমে আনলিমিডেট ডাটা প্যাকেজ অফার করতে পারবে, তা হবে ২৫ জিবি, ৫০ জিবি এবং ৭৫ জিবি। অর্থাৎ উক্ত তিনটি ভলিউমের যেকোনো একটি আনলিমিটেড প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে। বিটিআরসির অনুমোদন নিয়ে পরবর্তী সময়ে ভলিউম পরিবর্তন করা যাবে।
‘ফ্ল্যাক্সিবল প্ল্যান প্যাকেজের আওতায় গ্রাহকরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী টকটাইম, ডাটা ভলিউম, সোশ্যাল প্যাক, এসএমএস ইত্যাদি নির্বাচন করে নিজের প্যাকেজ নিজেই ডিজাইন করতে পারবেন। প্রদর্শিত মূল্য গ্রাহকের পছন্দ হলে নিজেই তার মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে প্যাকেজটি গ্রহণ করতে পারবেন এবং এটি একটি রেগুলার প্যাকেজ হিসেবে গণ্য হবে’Ñ যোগ করেন তিনি।
নতুন নির্দেশিকায় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একই প্যাকেজ কিনলে ডেটা ক্যারি ফরওয়ার্ড (অব্যবহৃত ডেটা নতুন প্যাকেজে যুক্ত হওয়া) করার সুযোগ রয়েছে। ক্যারি ফরওয়ার্ড করা যাবে সর্বোচ্চ ৫০ জিবি ডাটা পর্যন্ত। এছাড়া, গ্রাহককে অপারেটররা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩টি প্রমোশনাল এসএমএস দিতে পারবে, যা এখন রয়েছে ৪টি। সোশ্যাল প্যাকেজের ক্ষেত্রেও মেয়াদের মধ্যে একই প্যাক পুনরায় গ্রহণ করলে অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড হবে এবং বোনাস হিসেবে প্রদান করা ডাটাও ক্যারি ফরওয়ার্ডের অন্তভুর্ক্ত হবে। যেকোনো প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন আগেই গ্রাহককে এসএমএস—এর মাধ্যমে ডাটার মেয়াদ শেষ হওয়ার নোটিফিকেশন পাঠাতে হবে। অব্যবহৃত ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ডের ক্ষেত্রেও মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে চলতি প্যাক পুনরায় ক্রয় করার নির্দেশনা উক্ত এসএমএসে থাকবে।
বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার বলেন, মোবাইল ডাটার ফ্লোর প্রাইস ও সিলিং প্রাইস আপাতত নির্ধারণ করা না হলেও ভবিষ্যতে সময়ের চাহিদানুযায়ী সেটা নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিটিআরসি কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিটিআরসির ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান, টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম হাবিবুর রহমান, বাংলালিংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক অস প্রমুখ।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, গ্রাহকদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে ২০২২ সালে এক নির্দেশিকায় ৩, ৭, ১৫, ৩০ এবং আনলিমিটেড মেয়াদে মোবাইল অপারেটরদের জন্য সর্বোচ্চ ৯৫টি ডাটা প্যাকেজ নির্ধারণ করে দেয় বিটিআরসি। এরপর চলতি বছরের ৩০ মে প্যাকেজ ও ডাটার মূল্য সংক্রান্ত মতবিনিময় সভায় গ্রাহক জরিপের ফলাফল তুলে ধরে বিটিআরসি।
জরিপে অংশ নেওয়া ১ হাজার ৬০০ ডাটা ব্যবহারকারীর ৪৪ দশমিক ৫ শতাংশ বিদ্যমান পাঁচটি মেয়াদ বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। অপরদিকে ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ গ্রাহক চান ৭, ৩০ ও আনলিমিটেড মেয়াদের প্যাকেজ। সেই অনুযায়ী ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদ বাতিল করা হয়।
খুলনা গেজেট/কেডি