যশোরের নওয়াপাড়ার এক ব্যবসায়ীর তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ মামলায় তিন আসামিকে ঢাকা থেকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতব্যাপী ঢাকার বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনার নেপথ্যের কারিগর বনানীর কে ব্লকের কাজী এম এ মজিদের স্ত্রী ও মামলার প্রধান আসামি ফারজানা ইয়াসমিন নিলা পালিয়ে গেছে।
আটককৃতরা হলেন, নিলার মেয়ে নন্দিতা মেহজাবিন কথা, ছেলে অনন্ত আরমান কাব্য ও ম্যানেজার ক্ষিলক্ষেত জোয়ার সাহারা এলাকার খালেকের ছেলে মোহাম্মদ উল্লাহ বাবুল।
এর আগে, গত ২৪ জুন অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার মৃত শাহ আশরাফের ছেলে ব্যবসায়ী শাহ আলম হোসেন বাদী হয়ে ওই চারজনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী শাহ আলমের সাথে আসামিদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। আসামিরা তার কাছে ব্যবসার কথা বলে তিন কোটি টাকা ধার চান। যা যশোরের উপশহর এলাকায় এসে ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট আসামিরা শাহ আলমের কাছ থেকে ওই টাকা নেন। এ সময় কথা ছিল ১০ ভাগ হারে মাসিক মুনাফা দেবেন আসামিরা। টাকা নেওয়ার পর মাত্র এক মাসের মুনাফা দেন তারা। পরে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন। এ হিসেবে আসামিদের কাছে ২১ লাখ টাকা মুনাফা বকেয়া পড়ে। একপর্যায়ে বাদী টাকা ফেরত চান। কিন্তু আসামিরা তালবাহানা শুরু করে। এর মাঝে গত ৩ জানুয়ারি মুনাফাসহ তিন কোটি ২১ লাখ টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। একই সাথে তা যশোরের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র করা হয়। কিন্তু তিন মাস পার হলেও সে টাকা ফেরত না দিয়ে নানাভাবে ঘোরাতে থাকে আসামিরা। সর্বশেষ গত ১৫ জুন বিকেলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে আসামিরা ওই টাকা ফেরত দেবে না বলে জানান ও নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দেন। এমনকি আসামি নীলা তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা করার হুমকি দেন।
পরে বাদী খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, নীলার সাথে আওয়ামী লীগ নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এছাড়া, তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আত্মসাতের একাধিক মামলা রয়েছে এবং কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। পরে তিনি কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির এসআই কামাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ঢাকায় তাদেরকে আটক করা হয়েছে। একই সাথে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রধান আসামি নিলাকে ধরতে ও টাকা উদ্ধারে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
এদিকে, পুলিশ ও অপর একটি সূত্র জানায়, এই নীলা চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। নীলা যশোরের উপশহর এলাকার আনিছুর রহমানের কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা, ঢাকার হালিমের কাছ থেকে ২৫ লাখ ও কুষ্টিয়ার সাজেদুল ইসলাম রাজিবের কাছ থেকে ১৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে তিনি শতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। অনেকেই তার বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন। কিন্তু নীলা রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
খুলনা গেজেট/এএজে