কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট উত্তেজনার ভেতর ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ৭মে থেকে ৯মে’র ভেতর তিনদিনে ছয় জেলার অনেকগুলো সীমান্ত দিয়ে তিনশর মতো মানুষকে বাংলাদেশের সীমানায় ‘পুশ ইন’ করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।
বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের সীমানায় ‘পুশ ইন’ করা অর্থাৎ জোর করে ঠেলে দেওয়া এসব মানুষের ভেতর বাংলাদেশি নাগরিকদের পাশাপাশি রোহিঙ্গা ও ভারতীয় নাগরিকরাও আছেন।
সর্বশেষ গত ৯ মে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৮ জনকে ফেলে যায় বিএসএফ। পুলিশ বলছে, এদের মধ্যে ৭৫ জন বাংলাদেশি ও তিনজন ভারতীয় নাগরিক। উদ্ধারকৃতদের বরাত দিয়ে পুলিশ এও জানিয়েছে যে, তাদের গুজরাট থেকে উড়োজাহাজে-লঞ্চে করে চোখ বেঁধে আনা হয়েছে, অনেকে অসুস্থ এবং কারও কারও শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন আছে।
এর আগে ৭ মে বুধবার পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি ও উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে পুশ ইন করানোর পর ১২৩ জনকে আটক করে বিজিবি। তাদের ভেতর খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা, শান্তিপুর ও পানছড়ি সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিরাও জানান, তাদের গুজরাট থেকে বিমানে করে প্রথমে ত্রিপুরায় নিয়ে আসেন বিএসএফ সদস্যরা। তারপর এক ঘণ্টা হাঁটিয়ে সীমান্ত দিয়ে এ পারে ঠেলে দেওয়া হয়। এই অনুপ্রবেশকারীদের ভেতর বাংলা ভাষাভাষী ছাড়াও রোহিঙ্গা ও গুজরাটি ভাষায় কথা বলা মানুষও ছিল বলে জানায় স্থানীয় প্রশাসন।
প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের নাগরিক বলে ভারত যেভাবে এত-এত মানুষকে সীমান্তের এপারে ঠেলে দিলো তা কতটা যুক্তিসঙ্গত? বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে এমন একটি সংবেদনশীল ও জটিল ইস্যুতে কেন আনুষ্ঠানিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হচ্ছে না? আর পুশ ইনের জন্য ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলা এমন যুদ্ধকালীন একটি সময়কেই বা কেন বেছে নেওয়া হলো? এর মাধ্যমে ভারত কী বার্তা দিতে চাইছে বাংলাদেশকে? এক্ষেত্রে বাংলাদেশেরই বা করণীয় কী?
আলোচিত এ ঘটনা প্রসঙ্গে গত বুধবারই অন্তর্বর্তী সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা প্রতিটি কেস আলাদা আলাদাভাবে নিরীক্ষণ করছি। আমাদের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, আমাদের দেশের নাগরিক যদি কেউ হয়ে থাকেন, আর সেটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের আমরা গ্রহণ করব। তবে এটা ফরমাল চ্যানেলে হতে হবে। এভাবে পুশ–ইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়।’
পরে ৮মে এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ভারতকে অবিলম্বে এ ধরনের কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানানো হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণায়ের পাঠানো এক চিঠিতে। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে এই ধরনের পুশ ইন গ্রহণযোগ্য নয়।’
এ ব্যাপারে পর্যবেক্ষকদের ভাষ্য, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে পরিবর্তিত রাজনৈতিক বাস্তবতায় এবং প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে একটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনের পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত; যা গভীর উদ্বেগের একটি বিষয়। এটি চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। দুই দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করা এ পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি)-২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফের মহাপরিচালক পর্যায়ের বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার, কূটনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইতিহাস বিষয়ের গবেষক আলতাফ পারভেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ এবং অভিবাসনবিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীর- এর সঙ্গে।
এই বিশ্লেষকরা বলছেন, পুশ ইন-পুশ ব্যাক ইস্যু কেবল নিরাপত্তা নয়, মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দৃষ্টিকোণ থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের কার্যক্রম সীমান্তবর্তী জনগণের জীবনে অনিশ্চয়তা ও ভয় সৃষ্টি করে। তাই দ্রুত এর সমাধান জরুরি।
বিষয়টি নিয়ে কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহারের পর্যবেক্ষণ হলো, ‘এখন যুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের পরিবেশে কোনো না কোনো বর্ডারে একটা সংঘর্ষ তারা [ভারত] লাগাতে চায়। সেই চেষ্টা তারা করছে। পুশ ইনের ঘটনার আগে বাংলাদেশের সীমান্তের ভেতরে এসে অনেকগুলো জায়গা তাদের বলে দখল করেছিল। বাংলাদেশের জনগণ বিজিবির সঙ্গে মিলে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে।
‘এখন সীমান্তে একটা সংঘর্ষ লাগিয়ে তারা প্রমাণ করতে চায় পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা সম্পর্ক হওয়ার কারণে পাকিস্তানি জঙ্গিরা সীমান্তে এসেছে। এমন একটি গল্প তারা তৈরি করতে চায়। সেই গল্প তৈরি করবার রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত ইতোমধ্যে বাংলাদেশে তৈরি হয়ে আছে।’
আওয়ামী লীগের এত এত নেতাকর্মী ওখানে [ভারতে] আছে। ওরা তো কেউ বৈধভাবে ওখানে যায়নি। ওদেরকে পাঠাচ্ছেন না কেন?
বিষয়টি নিয়ে অবিলম্বে সেনাপ্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে সবাইকে নিয়ে একটি জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ গঠন করা দরকার বলে মনে করেন ফরহাদ মজহার। আর এ ব্যাপারে গবেষক আলতাফ পারভেজের পরামর্শ হলো, সর্বদলীয় বৈঠকের মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ করতে হবে অন্তর্বর্তী সরকারকে।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এত এত নেতাকর্মী ওখানে [ভারতে] আছে। ওরা তো কেউ বৈধভাবে ওখানে যায়নি। ওদেরকে পাঠাচ্ছেন না কেন?’
পুশ ইন কিংবা পুশ ব্যাক নিয়ে এই রাষ্ট্রচিন্তকের ভাষ্য, ‘পুশ ইন বিষয়টিই সম্পূর্ণ মানবাধিকার পরিপন্থী। কেউ যদি অবৈধভাবে কোনো দেশে ঢুকে থাকে, স্বভাবতই তাদের যে আইন আছে সে অনুসারে তাদের বিচার হবে। অথবা বিষয়টি তারা সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারকে জানাবে। এটা না করে পুশ ইন করাটা মানবতার বিরুদ্ধে জঘন্য একটা অপরাধ। আর যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এটা করাটা উদ্দেশ্যমূলক।’
কূটনীতিক ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরও বলেন, ‘ওরা [ভারত] যদি মনে করে যে বেআইনিভাবে ওখানে কেউ আছে যারা বাংলাদেশি; তাহলে বাংলাদেশের কাছে ইনফরমেশন পাঠাবে। বাংলাদেশ সরকার সেটা যাচাই করে ইয়েস অর নো কিছু একটা বলবে। আইনটা এমনই আছে। যদি দেখা যায় যে তারা বাংলাদেশি, তাহলে বিএসএফের মাধ্যমে তাদেরকে বর্ডারে আনা হলে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ তাদের বুঝে নেবে। এটাই নরমাল প্রসেস।’
সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই এসব প্রসেস মানতে চায় না তারা [ভারত]। কাউকে সন্দেহ করলে পুশ করে দেয়। এটা যে নতুন তা না। মাঝেমধ্যে হয়েছে। কিন্তু এই স্কেলে হয়নি। এটা আমাদের দিক থেকে একটা চিন্তার কারণ।’
এ ব্যাপারে করণীয় প্রসঙ্গে হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য, ‘বাংলাদেশের অবশ্যই আনুষ্ঠানিকভাবে আপত্তির কথাটা জানানো উচিত। এক্ষেত্রে তারা [ভারত] যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে যারা বাংলাদেশি না তাদের আমরা পুশ ব্যাক করে দিতে পারব।
হুমায়ুন কবীরের ভাষ্য, ‘বিধিবিধান না মেনে যাদের পাঠানো হচ্ছে তার প্রতিবাদ আমাদের জানানো উচিত এবং তাদের [ভারতীয়] কর্তৃপক্ষ) বলা উচিত যে, এই মাধ্যমটা তারা যেন ব্যবহার না করে। তারপরেও যদি তারা এটা কনটিনিউয়াসলি করতে থাকে সেক্ষেত্রে দুই দেশের সম্পর্কে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সেটাও তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে।’
ভারতের ‘সুপরিকল্পিত সচেতন পদক্ষেপ’
ফরহাদ মজহারের মতোই ভারতের দিক থেকে ঘটনাটিকে একটি ‘সুপরিকল্পিত সচেতন পদক্ষেপ’ হিসেবেই দেখছেন আলতাফ পারভেজ। তিনি বলেন, ‘পুশ ইন কিন্তু একটা জায়গা থেকে হচ্ছে না। সীমান্তের অনেকগুলো জায়গা থেকে হচ্ছে। তার মানে এটা বেশ সমন্বিত। বেশ পরিকল্পিত। ভারতের দিক থেকে এটা বেশ ডিজাইন করা পরিকল্পনা। এর সাক্ষ্য হলো যারা এসে পড়েছেন, তারা বলছেন যে সীমান্তের ওপারে আরও বহু মানুষকে জড়ো করা হয়েছে। তার মানে ভারত একটা সুপরিকল্পিত সচেতন পদক্ষেপই নিয়েছে।’
ভারতের পাকিস্তানে হামলার দিন এভাবে বাংলাদেশের অনেকগুলো সীমান্তে পুশ ইনের এ ঘটনা কেবল উদ্বেগজনকই আমি বলব না, এটা উসকানিমূলকও।
এই গবেষক আরও বলেন, ‘এটা আবার এমন দিনে শুরু হলো যেদিন তারা [ভারত] পাকিস্তানে হামলা করল। স্বভাবতই বাংলাদেশের মানুষ একটু উদ্বিগ্ন। যাদের পুশ ইন করা হয়েছে, বলা হচ্ছে তাদের টেনে আনা হয়েছে গুজরাট থেকে। পুরো এশিয়ারই শেষ সীমা বলা যায় যেটাকে। ওদেরকে এনে যদি খাগড়াছড়ির মতো জায়গায় পুশ ইন করা হয়, সেটাকে অতি পরিকল্পিত ঘটনাই বলতে হবে।’
ফরহাদ মজহারের মতো আলতাফ পারভেজেরও পর্যবেক্ষণ, ‘এভাবে গুজরাট থেকে এনে পুশ ইন করার আগে আমরা অন্তত জানি না যে ভারত বাংলাদেশকে বলেছে এরা অবৈধ বাংলাদেশি। কিংবা ভারতে এত সংখ্যক অবৈধ বাংলাদেশি আছে। ফলে ভারতের পাকিস্তানে হামলার দিন এভাবে বাংলাদেশের অনেকগুলো সীমান্তে পুশ ইনের এ ঘটনা কেবল উদ্বেগজনকই আমি বলব না, এটা উসকানিমূলকও।’
এভাবে পুশ ইনের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তেও একটা সামরিক উত্তেজনা জারি রাখতে চাইছে মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক আরও বলেন, ‘একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে কেউ যদি সীমান্ত দিয়ে কোনো ধরনের সতর্কতা ছাড়া, নোটিশ ছাড়া দলে দলে মানুষকে পুশ ইন করে, যেকোনো দেশের সরকারই এটাকে পুশ ব্যাক করবে। তাহলে বাংলাদেশের সামনে বিকল্প হলো পুশ ব্যাক; যেটা আপাতদৃষ্টিতে অমানবিক। কিন্তু বাংলাদেশ তো একটা রাষ্ট্র। ফলে এখন পুশ ইন-পুশ ব্যাক দুটোই যদি শুরু হয় তাতে সীমান্তে একটা সামরিক উত্তেজনা তৈরি হবে। আর ভারতের এটা অনুমান না করার কোনো কারণ নেই যে, তারা যেটা করছে সেটা সামরিক উত্তেজনা তৈরির প্রথম পদক্ষেপ।’
‘জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে’ জড়িত এমন একটি ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে অন্তবর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক করার পরামর্শ দেন আলতাফ পারভেজ। বলেন, ‘বৈঠক আহ্বান না করে সরকার বিষয়গুলো [পুশ ইন, মানবিক চ্যানেল] যেভাবে ডিল করতে চাচ্ছে, তা অনির্বাচিত একটা সরকারের পক্ষে ডিল করা সম্ভব না। এটা ঝুঁকিপূর্ণ।
‘সব রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৈঠক ডেকে সরকার তার রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করতে পারে, যেটা এখন খুব জরুরি। যেহেতু পার্লামেন্ট নেই।’
‘নয়াদিল্লির কৌশলগত চাল’
৮ মে বৃহস্পতিবার ‘পুশ ইন’ করার এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। এই সংগঠনটিও মনে করছে, এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। বরং এটি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির পটভূমিতে বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে চাপে ফেলতে নয়াদিল্লির একটি কৌশলগত চাল।
যদি রোহিঙ্গাদের পাঠাতে হয় তো ভারতই তাদের মিয়ানমারে পাঠাবে। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ভালোই সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ তো আর সব রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, বিষয়টি নিয়ে প্রথমেই বিজিবি ও বিএসএফের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে পতাকা বৈঠক হওয়া দরকার। এ বিষয়টাও ভালো করে দেখা দরকার যে, কারা কোন দেশের নাগরিক। যদি তাদের কেউ বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের দায়িত্ব হবে তাদের বুঝে নেওয়া। আর যদি তারা বাংলাদেশের নাগরিক নাও হয়ে থাকেন, তাহলে ওই ফ্ল্যাগ মিটিংয়েই বলা উচিত যে তারা বাংলাদেশের নাগরিক না।
ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এখানে প্রশ্ন উঠতে পারে—রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কী হবে? ভারত তো ওই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠাতে পারে না। যদি রোহিঙ্গাদের পাঠাতে হয় তো ভারতই তাদের মিয়ানমারে পাঠাবে। ভারতের সঙ্গে মিয়ানমারের ভালোই সম্পর্ক আছে। বাংলাদেশ তো আর সব রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়নি।’
এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘ফ্ল্যাগ মিটিংয়ে এটার যদি সমাধান না হয়, তাহলে এটা উপরের লেভেলে আনা দরকার। এমনকি যদি হাইকমিশনারকে তলব করতে হয় সেটাও করা যেতে পারে। এতেও সমাধান না হলে ফরেন সেক্রেটারি লেভেলে যোগাযোগটা হতে পারে।’
এটা নিয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে ৭ মে বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি।’
এটা [পুশ ইন] বাড়তেও পারে। এ জন্য দ্রুত একটা পরিকল্পনা দরকার।
এ ব্যাপারে ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘ভারতের হাইকমিশনার তো এখানেই (ঢাকায়) থাকেন। তার সঙ্গে তো বসাই যায়। হাইকমিশনার যদি বলেন এটা তার ম্যান্ডেট না, আরও উপরে যোগাযোগ করতে হবে তাহলে সেটাই করতে হবে। টেলিফোনে আলোচনার মাধ্যমেও তো এটা করা যায়। সময় নষ্ট না করে সেটা করাই ভালো।’
বিষয়টি নিয়ে অভিবাসনবিশেষজ্ঞ আসিফ মুনীরের ভাষ্য, ‘যখন পাশের দেশে এমন অস্থির একটা অবস্থা তৈরি হচ্ছে তার একটা চাপ সীমান্তে পড়বেই।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু ভারতের সঙ্গে আমাদের একটা কূটনৈতিক সম্পর্ক আছে এটা সেভাবেই সমাধান করতে হবে। কূটনৈতিক পর্যায়েও, উভয় দেশের বর্ডার ফোর্সের পর্যায়েও।’
পুশ ইনের এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্নভাবে দেখার সুযোগ নেই জানিয়ে আসিফ মুনীর আরও বলেন, ‘এটা [পুশ ইন] বাড়তেও পারে। এ জন্য দ্রুত একটা পরিকল্পনা দরকার।’
খুলনা গেজেট/এমএনএস