খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৭ দিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা
  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত

তাড়াশে তিন খুন : মামা-মামী ও মামাতো বোনকে হত্যা করছে ভাগনে

গেজেট ডেস্ক

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে একই পরিবারের তিনজনকে গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার আসামি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন এবং তিনজনকে হত্যার কারণ জানিয়েছেন। আজ বুধবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. আরিফুর রহমান মণ্ডল সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশ সুপারের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম রাজীব কুমার ভৌমিক (৩৫)। তিনি হত্যার শিকার বিকাশ সরকারের (৪৫) আপন ভাগনে।

গত সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাড়াশ উপজেলা সদরের বারোয়ারি বটতলা মহল্লার একটি তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে তিনজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই এলাকার কালীচরণ সরকারের ছোট ছেলে বিকাশ সরকার (৪৫), তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (৪০) এবং তাঁদের একমাত্র মেয়ে তাড়াশ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী পারমিতা সরকার ওরফে তুষি (১৫)। নিহত বিকাশ সরকারের বড় ভাই প্রকাশ সরকার (৭০) তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তিনতলা ভবনটিতে দুই ভাইয়ের পরিবার ও তাঁদের ভাড়াটেরা বসবাস করেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাঁরা নিহত বিকাশ সরকারের মুঠোফোনের কললিস্ট ধরে হত্যাকাণ্ডের আগে ভাগনে রাজীবের সঙ্গে তাঁর একাধিকবার কথা বলার বিষয়টি লক্ষ করে। এই সূত্র ধরে রাজীব ও আরও কয়েকজন স্বজনকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর তাড়াশ থানায় ডেকে নেয় পুলিশ। রাজীবের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তাঁকে আটক করে রাতে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় রাজীব তাঁর মামা, মামি ও মামাতো বোনকে একসঙ্গে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

হত্যার শিকার বিকাশ সরকার, তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (মাঝে) ও তাঁদের একমাত্র মেয়ে পারমিতা সরকার (ডানে)
হত্যার শিকার বিকাশ সরকার, তাঁর স্ত্রী স্বর্ণা রানী সরকার (মাঝে) ও তাঁদের একমাত্র মেয়ে পারমিতা সরকার (ডানে)ছবি: সংগৃহীত
এর আগে বিকাশ সরকারের সম্বন্ধী (স্ত্রীর বড় ভাই) সুকোমল চন্দ্র সাহা বাদী হয়ে তাড়াশ থানায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় রাতেই রাজীবকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল জানান, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্‌ঘাটন ও আসামি গ্রেপ্তারে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. সামিউল আলমের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি টিম গঠন করা হয়। এ টিমে আরও ছিলেন উল্লাপাড়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অমৃত কুমার সূত্রধর, জেলা গোয়েন্দা শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জুলহাজ উদ্দীন প্রমুখ। হত্যাকাণ্ডের খবর পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হয়। হত্যায় ব্যবহৃত আলামত জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি লোহার রড, একটি লোহার হাঁসুয়া, আসামির মুঠোফোন ও মোটরসাইকেল।

গ্রেপ্তার রাজীব কুমার ভৌমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি নিহত বিকাশ সরকারের ছোট বোন প্রমীলা রানী সরকারের ছেলে। তাঁর বাবা মারা যাওয়ার পর ২০২১ সাল থেকে মামা বিকাশ সরকারের সঙ্গে খাদ্যশস্য কেনাবেচার যৌথ ব্যবসায় যুক্ত হন। মামা বিকাশ সরকার ব্যবসার পুঁজি হিসেবে তাঁকে ২০ লাখ টাকা দেন। ব্যবসা চলমান অবস্থায় তিনি মামাকে বিভিন্ন ধাপে ব্যবসার লভ্যাংশসহ প্রায় ২৬ লাখ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু চলতি বছর বিকাশ ভাগনে রাজীবের কাছে ব্যবসা থেকে অর্জিত আরও ৩৫ লাখ টাকা দাবি করেন। ২২ জানুয়ারি বিকাশ তাঁর প্রাপ্য টাকা সাত-আট দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার জন্য রাজীবকে চাপ দেন এবং টাকার জন্য রাজীবের মাকে (বিকাশের বোন) মুঠোফোনে কল করে গালমন্দ করেন। রাজীব টাকা জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে ও মামার বকাবকিতে মনঃকষ্ট পেয়ে মামা ও তাঁর পুরো পরিবারকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৭ জানুয়ারি বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে রাজীব মামা বিকাশকে ফোন করে পাওনা টাকা নিয়ে বাসায় যেতে চান। এ সময় বিকাশ সরকার ব্যক্তিগত কাজে বাসার বাইরে তাড়াশের কাটাগাড়ি বাজার এলাকায় ছিলেন। তিনি রাজীবকে টাকা নিয়ে বাসায় আসতে বলেন। তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে গল্পগুজব করতে বলেন। রাজীব মামার বাসায় যাওয়ার পর মামি স্বর্ণা রানী সরকারের কাছে কফি খেতে চান। তাঁর মামি (বিকাশের স্ত্রী) তাঁকে কফি খাওয়ানোর জন্য বাসার নিচে দোকানে কফির প্যাকেট কিনতে যান। এ সময় রাজীব ব্যাগে করে আনা লোহার রড বের করে মামাতো বোন পারমিতার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এর মধ্যে মামি কফি কিনে বাসায় ফিরে এলে তাঁকেও একইভাবে লোহার রড দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। পরে হাঁসুয়া দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে মামা বাসায় ঢুকলে তাঁকেও প্রথমে লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন এবং পরে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

মরদেহ তিনটি কক্ষে রেখে তালা দিয়ে রাজীব নিজের বাড়ি পাশের উপজেলা উল্লাপাড়ার তেলিয়াপাড়ায় চলে যান। পথে লোহার রডটি একটি পুকুরে ফেলে দিলেও রক্তমাখা হাঁসুয়াটি নিজের বাড়িতে নিয়ে রেখে দেন।

২৭ জানুয়ারি রাত থেকে বিকাশ সরকারের আত্মীয়স্বজনেরা মুঠোফোনে বিকাশের পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। ২৮ জানুয়ারিও ফোনে কাউকে না পেয়ে ২৯ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে তাঁরা বিকাশের বাসার সামনে এসে দেখেন, ফ্ল্যাটে তালা দেওয়া। এ সময় বিকাশের ফোনে কল করলে তালাবদ্ধ ফ্ল্যাটের ভেতর থেকে রিংটোনের আওয়াজ পাওয়া যায়। এ সময় কয়েকজন তালা ভাঙার কথা বললে বাকিরা তাতে সায় না দিয়ে পুলিশকে আগে খবর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রাত আড়াইটার দিকে আত্মীয়স্বজনদের উপস্থিতিতে তাড়াশ থানার পুলিশ তালা কেটে বিকাশ সরকারের ফ্ল্যাটে প্রবেশ করলে পরিবারের তিনজনেরই গলাকাটা লাশ পাওয়া যায়।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি রাজীব কুমার ভৌমিককে আদালতে পাঠানোর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!