খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

তালেবানদের পাশে চীন, দিল্লিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুশিয়ারি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে যখন তালেবানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন তখন একইদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দিল্লিতে ঘোষণা করেছেন, আফগানিস্তানে তালেবান যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাহলে তারা কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে এক যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে তারা আরও জানিয়েছেন, তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার মধ্যে সমাধান খোঁজাই একমাত্র পথ বলে দুই দেশ বিশ্বাস করে।

আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানকে নিয়ে গঠিত যে ‘কোয়াড’ জোটকে নিয়ে চীন বেশ কিছুদিন ধরে আপত্তি জানিয়ে আসছে সেই প্ল্যাটফর্মেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে উভয় দেশই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

বস্তুত, এ বছরের গোড়ায় বাইডেন প্রশাসন ওয়াশিংটনে দায়িত্ব নেয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের এটাই ছিল প্রথম ভারত সফর।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে এসে পৌঁছনোর পর তিনি বুধবার সকালে প্রথমে বৈঠক করেন ভারতের সুশীল সমাজের বাছাই-করা জনাকয়েক প্রতিনিধির সঙ্গে। তারপর একে একে দেখা করেন দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে। সবগুলো বৈঠকেই আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা তথা আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি।

পরে বিকেলে দু’দেশের যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে আফগানিস্তান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেক্রেটারি ব্লিঙ্কেন বলেন, “এটা ঠিকই যে গত সপ্তাহে আমরা বেশ কয়েকটি জেলা সদরে তালেবানের অগ্রযাত্রা দেখেছি।”

“প্রাদেশিক কয়েকটি রাজধানীও তারা কব্জা করতে চাইছে। যে সব এলাকা তারা দখল করেছে সেখানে নির্যাতন চালানোরও খবর আসছে – যেগুলো সত্যিই বিচলিত করার মতো।”

“পাশাপাশি আমি এটাও বলব তালেবান কিন্তু বহুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাইছে, চাইছে তাদের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক এবং তাদের নেতারা যাতে দুনিয়ায় অবাধে ঘুরে বেড়াতে পারেন।”

“কিন্তু আফগানিস্তানে জোর করে ক্ষমতা দখল করতে গেলে বা নিজেদের লোকদের ওপর অত্যাচার করে সে লক্ষ্য পূরণ হবে না।” আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়ে গেলেও সে দেশে শক্তিশালী একটি দূতাবাস ও নানা উন্নয়নমূলক ও অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের মধ্যে দিয়ে আমেরিকার জোরালো প্রভাব ও উপস্থিতি থাকবে বলেও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেন।

তবে তার ভারতীয় কাউন্টারপার্টের কথা থেকেও স্পষ্ট হয়ে গেছে, সে দেশ থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারে ভারত হতাশ – কিন্তু এখন তারা সেই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে শান্তিপূর্ণ আলোচনার ওপরেই জোর দিতে চাইছে।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেন, “গত কুড়ি বছর ধরে যেখানে একটা শক্তিশালী মার্কিন সামরিক উপস্থিতি ছিল তা তুলে নেয়া হলে অবশ্যই তার প্রভাব পড়বে, সেটা অবধারিত।”

তালেবানের পাশে চীন

এদিকে আফগানিস্তানের প্রধান কয়েকটি শহর দখলের পর প্রথমবারের মতো তালেবানের কোনো শীর্ষ নেতা হিসেবে চীন সফর করেছেন দলটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল ঘানি বারাদার। কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের দায়িত্বে থাকা এই গুরুত্বপূর্ণ নেতা বুধবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং য়ির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম।

বৈঠকে আফগানিস্তানের পুনর্গঠনে তালেবানের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীন। বুধবার চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

চীনের উত্তরাঞ্চলের শহর তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে তালেবান নেতা আব্দুল ঘানি বারাদারের নেতৃত্বে নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নেন। এসময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং য়ি আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সামরিক জোট ন্যাটোর সেনা প্রত্যাহারের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থ নীতির ফলাফল হিসেবে অভিহিত করেন। একই সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতেও তালেবানকে আহ্বান জানান তিনি।

ওয়াং য়ি বলেন, ‘তালেবান আফগানিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তি। দেশের শান্তি, সংহতি ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়াতেও গোষ্ঠীটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

তালেবানের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাইম জানিয়েছেন, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যকার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ইস্যু ও শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, তালেবানের প্রতিনিধি দল চীনকে নিশ্চিত করেছে যে আফগানিস্তানের মাটি অন্য কোনো দেশের নিরাপত্তায় হুমকি তৈরিতে ব্যবহার করতে দেয়া হবে না।

যুক্তরাষ্ট্রসহ সামরিক জোট ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের ৩১ আগস্টের মধ্যে নিজেদের সব সেনা সরানোর ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিদেশি সব সেনা আফগানিস্তান ছাড়ার মধ্যেই দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল দখলে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে তালেবান। আফগান সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই তাদের সংঘর্ষ বাঁধছে।

ইতোমধ্যে চীনের শিনজিয়াং প্রদেশের পাশের সীমান্ত অঞ্চলসহ দেশের প্রায় অর্ধেক এলাকা দখল করেছে তালেবান। আফগান সরকারের সমর্থনে এখনও তালেবান নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে বিমান হামলা চালু রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র।

এমন পরিস্থিতিতে চীন গভীর মনোযোগের সঙ্গে আফগানিস্থান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যম। কেননা আফগানিস্তান সংলগ্ন শিনজিয়াংয়ে চীনের বিপুল বিনিয়োগ রয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!