সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর মৌজার ৩৩ বিঘার দয়ানি-সরিগতি খাল প্রায় সাত বছর ধরে বেদখল হয়ে আছে। এতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রশাসন দীর্ঘকাল যাবত জলমহালটি খাস খাল হিসাবে ভাল মূল্যে স্থানীয় মৎস্য চাষীদের কাছে ইজারা দিয়ে আসছে। কিন্তু ২০১৭ সালে রবিউল ইসলামের নেতৃত্বে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি জাল দলিল ও কাগজপত্র দেখিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণকে বোকা বানিয়ে বৈধ ইজারাদের হটিয়ে তারা উক্ত জলমহাল দখল করে নেয়। পরে এই প্রভাবশালী চক্র ২০১৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে খন্ড খন্ড করে জলমহলটি লিজ (হারি) দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকা আদায় করে।
বিষয়টি নিয়ে খেশরা ইউনিয়নের হরিহরনগর গ্রামের মো. মতলেন সরদার জানান, সরকার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা দায়ের করে, যার নং-৬৯/২০১৭। দীর্ঘ শুনানি ও যাচাই-বাছাইয়ের পর আদালত রবিউল ইসলাম গংয়ের দলিলটি জাল হিসাবে ঘোষণা করে এবং সেটি জব্দ করে। একই সাথে আদালত জলমহালটি খাস খতিয়ান ভুক্ত করারসহ এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তালা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশ দেয়। পরে জাল দলিলকারী চক্রটি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে আপিল করে। তবে উক্ত আদালতও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখে।
দখলকারীরা সময় ক্ষেপণের অংশ হিসাবে উচ্চ আদালতে লিভ টু আপিল কারে যার নং-২১০৯/২২ এবং কয়েকবার শুনানির তারিখ পেছানোর আবেদন করে। তবে এক পর্যায়ে উক্ত আপিলের শুনানি হলে, তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে উচ্চ আদালত (হাইকোর্ট) নিম্ন আদালতের রায় অনুসরণের নির্দেশ দেয় (অর্ডার নং-৫৫১ অক্ষ ২০২২)। এরপরও রবিউল ইসলাম প্রভাব খাটিয়ে জলমহালটি এখনো নিজের দখলে রেখেছে।
এদিকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা খালটি দীর্ঘদিন দখলে রাখায় স্থানীয় কৃষকরা ফুঁসে উঠেছে। এই জাল দলিলের মালিক রবিউল ইসলাম সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাসিন্দা। কৃষকরা দ্রুত এই খালের দখলমুক্ত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কৃষক আব্দুল ছালাম বলেন, জল মহালটি পূর্বে কৃষি জমির পানি নিষ্কাশন ও সেচ সুবিধা দেওয়ার শর্তে সরকার মৎস্য চাষীদের ইজারা দিত। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধয়ে এই দখলকারীরা তাদের নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে এই খাল ব্যবহার করতে কৃষকদের বাঁধা দিয়ে আসছে। ফলে আশপাশের কয়েক শত বিঘা জমি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বহিরাগতদের আনাগেনার কারণে স্থানীয় কৃষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। বিষয়টি সমাধানের জন্য তারা স্থানীয় প্রশাসন ও সবমহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
স্থানীয় জিয়াউর রহমানসহ অনেকে জানান, খাল বা নদী কারোর ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে পারে না। আমরা ছোট বেলা থেকে এই জলমহল খাস হিসাবে জেনে এসেছি। হঠাৎ দলিল আর কাগজপত্র বের হয়েছে, বিষয়টি জেনে আমরা অবাক হয়েছি। নদী-খালখোরদের হাত থেকে জলমহলটি উদ্ধারের পাশাপাশি অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি জানান তারা।
তারা আরও জানান, খালটি ব্যক্তি মালিকানায় দখল হওয়ায় সরকার শুধু রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাই নয়, দখলবাজরা যাচ্ছেতাই ভাবে জলমহালটি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে ঘনঘন বাঁধ দেওয়ার কারণে স্থানীয় পরিবেশ ও কৃষক সমাজ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে জলমহাল ভোগ দখলকারী রবিউল ইসলামের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমি নিয়ে আমার সরকারের সাথে ঝামেলা থাকতে পারে, স্থানীয়দের সাথে নয়। স্থানীয় কোন ব্যক্তির কোন বক্তব্য থাকলে তারা জেলা প্রশাসক, ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এছাড়া মামলা বিচারাধীন আছে। আমি যদি রায় না পাই তাহলে কোনদিন জলমহানে যাব না।
খুলনা গেজেট/এএজে