দখিনা বাতাস নেই। মিলছে না এক ফোঁটা বৃষ্টি। নড়ছে না গাছের পাতা। বাতাসে যেন আগুনের হল্কা। তেতে উঠেছে পথঘাট। বাইরে বের হলে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। ঘরেও স্বস্তি নেই। কংক্রিটের ছাদ ও টিনের চালা বেয়ে যেন আগুন নামছে। রমজানে এমন তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন রোজাদার, শ্রমজীবী মানুষ ও রোগীরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের পাঁচ বিভাগ ও এক জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা আরও ৫/৬ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ১৭ অথবা ১৮ এপ্রিল বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, এখন যে মৌসুম, তাতে গরম বেশি অনুভূত হবে– এটাই স্বাভাবিক। তবে মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর বৃষ্টি হওয়ার কথা। সেটা হচ্ছে না, কারণ দখিনা বাতাস নেই। ফলে এই বাড়তি তাপমাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং আরও বাড়তে থাকবে।
চৈত্রের প্রথম দুই সপ্তাহে তাপমাত্রা সহনীয় থাকার কারণ ছিল বৃষ্টি। কিন্তু বৃষ্টি কমে যাওয়ায় সপ্তাহখানেক ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। তবে তাপমাত্রা বাড়তে থাকলেও বাতাসে আর্দ্রতা কম। এ কারণে প্রচণ্ড গরমেও ঘাম কম হচ্ছে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ।
আবহাওয়া অধিদপ্তর গতকাল সন্ধ্যায় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কোথাও বৃষ্টি হয়নি। আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আরও ৭ থেকে ৮ দিন এই পরিস্থিতি চলতে পারে। কয়েকটি জেলায় দিনের তাপমাত্রা বাড়তেও পারে। এর পর সারাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। তবে সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি হতে পারে। মাসের শেষ ভাগে আরেকটি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, চলতি মাসেই তিন থেকে পাঁচ দিন বজ্রসহ মাঝারি ধরনের শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া এক বা দু’দিন তীব্র কালবৈশাখীর আশঙ্কা আছে। মাসের শেষে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর পাশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর প্রভাবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে স্বল্প মেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ১৪ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, যশোর জেলার দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠার আশঙ্কা রয়েছে। দেশের অন্যান্য জেলায় তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠতে পারে। ২৪ এপ্রিলের পর থেকে সিলেটের হাওর অঞ্চলে পাহাড়ি ঢল শুরুর আশঙ্কা আছে।
এ দিকে তাপপ্রবাহ দীর্ঘায়িত হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে আম চাষিরা পড়েছেন চিন্তায়।