‘ছাত্রলীগের ছেলেরা রামদা দিয়ে আমার মাথায় কোপ দেয়। আমি কলেমা শাহাদাত পড়তে থাকি, মনে হয় পৃথিবীর সফর শেষ। ঘরের ভিতরে কোনোমতে চিকিৎসা করে পল্লী চিকিৎসক। ম্যাচে খাবার নাই, পরাটা ডাল খেয়ে খিদে ও ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করি। প্রতিদিন ২রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম আল্লাহ আমাকে শহীদ করে নিও না হয় তুমি বিজয় দিয়ে গাজী বানিয়ে নিও । ৫তারিখে খবর পেলাম বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে, তখন আমি বাড়িতে বিছানায় শোয়া। আমি গর্বিত আমি দেশের জন্য রক্ত দিতে পেরেছি।’ এসব কথা বলছিলেন এইএসসি শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মোবাশশির।
সরকারি ব্রজলাল কলেজে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সকালে একাডেমিক ভবন ২ এর সেমিনার কক্ষে জুলাই আন্দোলনে আহতদের অভিজ্ঞতা ভাগ করার মাধ্যমে ‘জুলাই স্মরণ’ অনুষ্ঠান ২০২৫ এর আয়োজন হয়।
৫ জুন ২০২৪ হাইকোর্টের আদেশ দিয়ে ২০১৮ সালের ‘কোটা বাতিল’ পরিপত্রকে অবৈধ ঘোষণা করে সরকারি, আধা সরকারি চাকরিতে ৩০% কোটা বহাল রাখার পরিপত্র জারি করে। এর পরপরই ক্ষোভে ফুসে ওঠে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। যত দিন গড়ায় তত প্রকট হতে থাকে আন্দোলন। একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগের। সরকারি গেজেট অনুযায়ী, গণ–অভ্যুত্থানে শহীদের সংখ্যা ৮৩৪, আহতের সংখ্যা সহস্রাধিক।
সরকারি ব্রজলাল কলেজের অধ্যাপক সেখ মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, শহীদদের চাওয়া-পাওয়া পুরণ করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। প্রশাসনকে আরও শক্তভাবে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে হবে। কোটা একটি মারাত্মক ব্যাধি, যেটি দক্ষজনশক্তিকে অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যায়।
মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রিফাত ইসলাম বলেন, মাকে অনেক বুঝিয়ে খুলনার বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করেছি। প্রায় প্রতিদিন রাস্তায় কোনো না কোনো মায়ের হাতের নাস্তা খেয়েছি, কেউ দিয়েছে দোয়া।
অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রফিকুজ্জামান বলেন, যখন আমরা অধিকার চেয়েছি তখন আমাদের রাজাকার আখ্যায়িত করা হলো। তারপর ১৬ জুলাই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্দোলনে যোগ দেই। নানান প্রতিকুলতার মধ্যেও আমরা থেমে থাকিনি। ঢাকা, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন করেছি।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রফেসর এস,এম, শোয়েব হোসেন। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানসহ শিক্ষক-শিক্ষিকা ও প্রায় দুইশত শিক্ষার্থী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/এএজে