“দুপুরে আঁধার ঢেকেছে আকাশ,
আলোর কি আর হবে অবকাশ ?”
–জীবনের অন্তিম লগ্নে এই গভীর আশঙ্কায় আচ্ছন্ন প্রশ্ন চিহ্ণ নিয়েই” ভ্রমর” চির বিদায় নিলেন ধন ধান্যে পুস্প ভরা বসুন্ধরা থেকে। বিশিষ্ট কবি, সমাজসেবী ও প্রতিবাদী কন্ঠ মহ: রাকিম সেখ। তিনি পাঠক মহলে ‘ভ্রমর’ বলেই পরিচিত। –ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪০ বছর । রেখে গেলেন স্ত্রী, দুই পুত্র, মাত্র ৪বছরের শিশু কন্যা ও অগনিত গুণমুগ্ধ।
মুর্শিদাবাদের সুতি থানার মাহাতাবপুর গ্ৰামে পিতা মুহাম্মাদ মেহেজুল সেখ ও মাতা সালেহা বিবির ঘরে জন্ম গ্ৰহণ করেন ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারি।
প্রাথমিক শিক্ষা গাজীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শেষ করে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন কাশিমনগর জুনিয়র হাইস্কুলে। মাধ্যমিক পাস করেন বাসুদেবপুর বি জে হাই স্কুল থেকে।
মহ: রাকিম দীর্ঘকাল হার্টের জটিল সমস্যায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি হার্ট অপারেশন করতে তিনি ব্যাঙ্গালোর যান। সেখানে প্রথমে জয়াদেবা হাসপাতালে, পরে যশবন্তপুর ট্রিপল ট্রি হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানেই গত ১৭জুন অপারেশন হয়। অপারেশনের পর জ্ঞান ফিরে সুস্থ দেখালেও কয়েক ঘণ্টা পর থেকেই তাঁর শারীরিক অবনতি শুরু হয়। এই অবনতি কাটিয়ে উঠতে না পেরে গত ১৯ জুন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁর জীবনদীপ চিরতরে নিভে যায়।
মহ: রাকিম, সংস্কৃতি মনস্ক হিসাবে নিজেকে উচ্চ মাত্রায় তুলে ধরেন। সেই সুবাদে তিনি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সাহিত্য সাধনার ক্ষেত্রে কবিতাই ছিল তাঁর প্রধান সাধন-ক্ষেত্র। সমকালীন বেশ কিছু ঘটনার উপর লেখা তাঁর কবিতা বাঙ্ময় হয়ে সোশ্যাল মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সফল কবির স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি একাধিক পুরস্কারও পান, যার মধ্যে রয়েছে–‘জন্মভূমি সাহিত্য পরিষদ’, ‘কবিতার আড্ডা সাহিত্য পরিষদ’, ‘বিশ্ব সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিবার’ প্রভৃতি পুরস্কার।
দু:স্থ সংসার জীবনকে সঙ্গী করেই কবিতা চর্চা, সমাজ সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। সর্বদা তাঁকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকায় দেখা গেছে। তিনি আপোষহীন সংগ্রামে অটল ছিলেন। রাজনৈতিক আন্দোলনের মঞ্চেও তাঁর প্রতিবাদী কন্ঠস্বর গর্জে উঠতো। বঞ্চিত শোষিত সমাজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের মঞ্চ হিসেবে সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি অফ ইন্ডিয়া (এসডিপিআই)-র সদস্য হন। তিনি এই দলের জেলা কমিটির সদস্যও ছিলেন।
কবি মহ: রাকিম সেখের অকাল প্রয়াণে অনেকেই শোক প্রকাশ করে তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। দোয়া করেন,আল্লাহ তাঁকে জান্নাতবাসী করুন।
বাঙগালোর থেকে লাশ আনার কারণে জানাজা দাফন কাফনে দেরি হয়। ২১ জুন মঙ্গলবার বেলা এগারোটায় গ্ৰামে জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং গ্ৰামের কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। জানাজার নামাজে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বহু মানুষ অংশগ্ৰহণ করেন।