খুলনা, বাংলাদেশ | ৫ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২০ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৪
  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত
তফশিল ঘোষণার পরপরই

সাতক্ষীরা পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তৎপর

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা পৌর সভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। নির্বাচন কমিশন কর্তৃক তফশিল ঘোষণার পরপরই নির্বাচনে অংশগ্রহনেচ্ছুক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। অনেকেই ইতিমধ্যে প্রচার প্রচানায় নেমে পড়েছেন। বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলদের সাথে সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি এলাকায় গিয়ে ভোটারদের সাথে মতবিনময় ও উঠান বৈঠক করছেন।

আসন্ন সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে বিভিন্ন দলের মোট ১২ জন মেয়র প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই দলীয় সমর্থন পাওয়ার জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে দলীয় সমর্থন না পেলে প্রচার প্রচারণা চালানো প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করে জামায়াত ইসলাম তাদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। যদিও তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন।

নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আওয়ামীলীগের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাতক্ষীরা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক, সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাহাদৎ হোসেন, জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান যুবলীগ নেতা সৈয়দ আমিনুর রহমান বাবু, জেলা আ’লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ, যুবলীগ নেতা এজাজ আহম্মেদ স্বপন ও সৌদি প্রবাসী মাহমুদুল আলম বিবিসি। এছাড়াও জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না আরা ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকাও আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করে নিজ নিজ সমর্থকদের দিয়ে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন।


আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ নাসেরুল হক এর পিতা মরহুম শেখ আশরাফুল হক সাতক্ষীরা পৌরসভার দুই বারের মেয়র ছিলেন। অন্যদিকে শাহাদাৎ হোসেন গত পৌর নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নির্বাচন করে চতুর্থ স্থানে ছিলেন। এখন কে নৌকা প্রতীক পাবেন এটা নিয়ে পৌর শহরে চলছে নানা গুঞ্জন।

এদিকে এখন পর্যন্ত বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছে বর্তমান মেয়র সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাজকিন আহমেদ চিশতী ও সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির সভাপতি প্রবীণ বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হবি। জাতীয় পার্টির কোন প্রার্থীকে মাঠে দেখা না গেলেও সাতক্ষীরা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি নূরুল হুদা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন। এছাড়াও গত পৌর নির্বাচনের  উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ভোট পাওয়া সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠুও এবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনি মাঠে রয়েছেন। পৌর এলাকায় সাধারণ ভোটারদের মধ্যে তার ব্যাপক পরিচিতি গড়ে উঠেছে।

অপরদিকে আসন্ন পৌর নির্বাচন উপলক্ষ্যে মাঠ চষে বেড়ানো প্রার্থীদের মধ্যে অনেকেই শেষ সময়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন কি না তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়ন না পেয়ে যিনি নৌকা প্রতীক পাবেন তাকেই সমর্থন দিবেন বলেও প্রচার রয়েছে। তবে হঠাৎ করে সাতক্ষীরার রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠা জামায়াত ইসলামী পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিয়েছে। রয়েছে মেয়র পদে একজন। তবে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী প্রকাশ্যে প্রচার প্রচারণায় অংশ না নিলেও রাতে এবং ভোরে বাড়িতে বাড়িতে লিফলেট পৌঁছে দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কাজী আক্তার বলেন, ইতিপূর্বে সাতক্ষীরা পৌরসভায় কাজের নামে অনেক অনিয়ম হয়েছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেকই কাজ করেনি। আমরা অযুহাত নয়, কাজ চাই। যিনি কাজ করতে পারবেন। আমরা তাকেই নির্বাচিত করবো।

সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, সাতক্ষীরা পৌরবাসী একজন সৎ ও যোগ্য মেয়র চায়। যিনি পৌরসভাকে ঢেলে সাজাবেন, সুপেয় পানির ব্যবস্থা করবেন, জলাবদ্ধতার হাত থেকে মানুষকে মুক্তি দিবেন। সর্বপরি আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করবেন। এমন একজন ব্যক্তিকেই পৌর পিতা হিসেবে প্রত্যাশা করেন পৌরবাসী।


পৌর সভার ৯নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আহছান বলেন, প্রায় সারা বছরই আমাদের এলাকায় জলাবদ্ধতা থাকে। পৌর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন। পৌর এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব না নিয়ে নিরব থাকেন। যে প্রার্থী আমাদের জলাবদ্ধতার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারবেন আমরা তাকেই নির্বাচিত করবো। পৌর সভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, সাতক্ষীরা পৌর সভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। গত পাঁচ বছরে কোন রাস্তা সংষ্কার করা হয়নি। নির্বাচনের সময় এসে মেয়র ও কাউন্সিলররা তড়িঘড়ি করে রাস্তা সংষ্কারের কাজ উদ্বোধন করছেন। কোন কোন জায়গায় রাস্তা সংষ্কারের কাজও শুরু করেছেন। জনগণ জনপ্রতিনিধিদের এসব চালাকি বুঝতে পেরেছে। এবার তারা প্রার্থী নির্বাচনে হিসেব করেই ভোট দিবেন। অবশ্য যদি তারা ভোট দেয়ার সুযোগ পায়।

এ বিষয়ে আ’লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ আবু নাসের বলেন, যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সকল ভেদাভেদ ভুল সকলকে সাথে নিয়ে সাতক্ষীরা পৌরসভার উন্নয়নে একসাথে কাজ করবো।
অন্যদিকে শাহাদাৎ হোসেন বলেন, আমি গতবারও নৌকা প্রতীক পেয়েছিলাম। এবারও মনোনয়ন পেলে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারবো এবং সাতক্ষীরা পৌরসভাকে ডিজিটাল পৌরসভায় রূপান্তরিত করবো।

বর্তমান মেয়র সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য তাজকিন আহমেদ চিশতী বলেন, পুনরায় দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জয়লাভ করতে পারলে অসমাপ্ত কাজ গুলো শেষ করে সাতক্ষীরা পৌরসভাকে আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালিয়ে আসা সাতক্ষীরা জেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি নাছিম ফারুক খান মিঠু বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভার প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা। পৌরবাসীর প্রাণ বাঁচাতে এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হবে আগে। কাজেই পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব পৌরসভাকেই নিতে হবে। এছাড়া শুধু রাস্তাঘাট নির্মাণ করলেই হবে না। নির্বাচিত হতে পারলে পৌরসভার সৌন্দয্য বর্ধন করা, পৌর প্রতিষ্ঠান এবং পৌর সম্পত্তি গুলোর সঠিক ব্যবহার করে একটি আধুনিক পৌরসভা গঠনের লক্ষ্যে কাজ করবো। তবে এ বিষয়ে জামায়াতের প্রার্থীদের কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!