খুলনা, বাংলাদেশ | ১৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  নির্বাচন নিয়ে বিএনপিকে দোষারোপ করা হচ্ছে : মির্জা আব্বাস
  শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকী আজ

ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের মারধর

গেজেট ডেস্ক

সাত কলেজ ইউনিটের কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার শীর্ষ নেতাদের বিরোধ নিয়ে উত্তেজনার মধ্যেই এবার ঢাবি ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই কর্মী। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শহীদ মিনার এলাকায় ওই দুই কর্মীকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তবে কে বা কারা কেন হামলা চালিয়েছে, তা এখনও জানা যায়নি।

ঘটনার পর রাতেই হাসপাতালে গিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় হামলাকারীদের খুঁজে বের করা হবে। যদিও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

হামলায় জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনার দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন, কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের বিরোধের জের ধরে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাদের ওপর হামলা হয়ে থাকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত অবশ্য বলছেন, এমন অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।

ছাত্রলীগের একটি অংশ আবার মনে করছে, কেন্দ্রীয় ও ঢাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের মনস্তাত্ত্বিক বিরোধের মধ্যে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ঘটনা ঘটাতে পারে। এমন নানা সন্দেহ আর গুঞ্জনের মধ্যে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ নেতাদের ওপর হামলার বিষয়টি নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বুধবার রাত ৩টার দিকে শহীদ মিনারের পাশে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের গেটের সামনে ঢাকা কলেজের দুই নেতা হামলার শিকার হন। তারা হলেন, কাওসার হাসান কায়েস ও সাব্বির হোসাইন। তারা দুজনই ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের আগামী কমিটির শীর্ষ পদপ্রত্যাশী এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইনারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

হামলায় আহত সাব্বির ঢাকা মেডিকেলে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তার মাথা ও ঘাড়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে। গুরুতর আহত কাওসারকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি মাথা ও চোখে চোট পেয়েছেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কাওসার বলেন, ‘’রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আমতলী গেটের সামনে দিয়ে বের হওয়ার সময় একটা মোটরসাইকেল আসে। তারা সামনে এসে ‘নেশা করেছিস নাকি’—এসব বলে গালমন্দ করতে থাকে। পরে দুই পক্ষই স্যরি বললে তারা সেখান থেকে চলে যায়।’’

এ ঘটনার কিছু সময় পর আরও চারটি মোটরসাইকেল এসে তাদের পথরোধ করে জানিয়ে বলেন, ‘’আমরা মোটরসাইকেল থেকে নামলে আমাদের আবারও গালমন্দ করতে থাকে তারা। ‘ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগ করস, তাই না?’ এই কথা বলেই আমাদের ওপর হামলা করে। এলোপাতাড়ি ঘুসি মারে। যার হাতে যা ছিল তাই দিয়ে মারে। কারও হাতে বাঁশ ছিল, কারও হাতে কলম ছিল। এলোপাতাড়ি যা-তা বলে মারতে লাগল। আমার অপরাধটা কী তা আমি বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারা মারল, বসাল, এরপর পুলিশ আসল। তখন তারা সরে গেল।’’

হামলায় জড়িতদের তাৎক্ষণিক কাউকে চিনতে পারেননি বলে জানান তিনি। তবে তাদের আবার দেখলে চিনতে পারবেন বলে জানান কাওসার।

খবর পেয়ে বুধবার রাতেই আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেলে যান ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। এ সময় তিনি বলেন, ‘কারা হামলা করেছে এটি খতিয়ে দেখব এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অবগত করব যেন হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে পারে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে সারা দিন অতিক্রম হলেও এ ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি ছাত্রলীগ। পাশাপাশি মারধরকারীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে কোনো তদন্ত কমিটি বা পুলিশের কাছে কোনো মামলাও হয়নি।

এর আগে ৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানাতে এসে ঢাবি ক্যাম্পাসে হেনস্থার শিকার হন সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ শাখার নেতাকর্মীরা। অভিযোগ উঠেছিল, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জের ধরে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ছাত্রলীগ সভাপতি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তবে গত এক সপ্তাহে কেন্দ্রীয় বা ঢাবি ছাত্রলীগ এ ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। হেনস্থাকারী হিসেবে অভিযুক্ত ঢাবির সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহরিয়ার নিরব ও বিজয় একাত্তর হল ছাত্রলীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান নিবির অবশ্য বলেছেন, তারা এমন ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই এবার ঢাবি ক্যাম্পাসে হামলার শিকার হলেন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা।

ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের মধ্যে অন্যতম ঢাকা কলেজ। মঙ্গলবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাডেমিক কার্যক্রম নিয়ে মতবিনিময় সভা ডেকে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, তাদের বাইরে গিয়ে সাত কলেজে ছাত্রলীগের কমিটি দেওয়ার সুযোগ নেই। তার এমন বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাত কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। ওই দিনই এ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের নেতারা। সেই ঘটনার রেশ ধরেই হামলা হয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

এ নিয়ে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকত  বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এ ধরনের কাজ কখনোই করবে না। আমাদের কারও যদি সংশ্লিষ্টতা থাকত আমি সঙ্গে সঙ্গেই ছুটে যেতাম। সাত কলেজ ছাত্রলীগের ছেলেরা তো আমাদেরই ভাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ইনান ভাইয়ের (ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান) সঙ্গে কথা বলেছি, তিনিও আমাকে বলেছেন যে এটা চলতি পথের বিবাদ থেকে একটি সংঘর্ষ হয়েছে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জড়িত না। আর যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কেউ হতো তাহলে ভুক্তভোগীরা তো চিনতে পারতেন। কারণ আমাদের সব প্রোগ্রামই একসঙ্গে হয় অনেক সময়। তাই এ ধরনের প্রশ্নের কোনো সুযোগ নেই, এটির কোনো ভিত্তি নেই।’

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!