যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল নিয়ে আজ শুক্রবার রাজধানীতে একযোগে মাঠে নামছে বিএনপিসহ ৩৩টি রাজনৈতিক দল। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ বেশ কিছু দাবিতে ঢাকায় এই কর্মসূচি পালন করবে তারা। কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের দিনটিও ‘কালো দিবস’ হিসেবে পালন করবে বিরোধীরা। এদিকে, আওয়ামী লীগ রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় সতর্ক পাহারায় থাকবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গণমিছিল নিয়ে বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১১ দলীয় জোট, জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি ও গণফোরামের একটি অংশ যুগপৎভাবে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, গণমিছিল থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। গতকাল দুপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে এক নেতা জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দাবি আদায় করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। গণমিছিল কর্মসূচি পালনের পর সকাল-সন্ধ্যা অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এটা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিএনপির গণমিছিল নয়াপল্টন থেকে মগবাজার
বিএনপির গণমিছিল নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে মগবাজার চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দলটির ভাইস-চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিভাগীয় গণমিছিলের প্রধান সমন্বয়ক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। আজ দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
ডা. জাহিদ বলেন, ‘আমাদের গণমিছিল হবে শান্তিপূর্ণ। দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়ে কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ হয়ে মগবাজার চৌরাস্তা ঘুরে ফের নয়াপল্টনে এসে শেষ হবে।’
ঢাকাবাসীকে গণমিছিল সফল করার আহ্বান জানিয়ে ডা. জাহিদ বলেন, ‘গণমিছিল করা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সেটার জন্যই আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়ার জন্য ডিএমপি কার্যালয়ে গিয়ে ছিলাম। আশা করছি, ডিএমপি আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।’
জানা গেছে, নয়া পল্টন ও এর আশপাশের ১৩টি স্পটে গণমিছিল উপলক্ষে জমায়েত হবে বিএনপির নেতাকর্মীরা। মূল মিছিল শুরু হবে দুপুর আড়াইটায় কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় থেকে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে থাকবেন শুধু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। সেখানে তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি উপস্থিত থাকবেন। বক্তব্য দেবেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
এ ছাড়া মূলদল, অঙ্গ ও সহযোগী এবং পেশাজীবী সংগঠনের জন্য মিছিলের স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, নাইটিঙ্গেল মোড়ে গণমিছিলের সম্মুখে থাকবে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। তারপরে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। এখানে সমন্বয় করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রশিদ হাবিব। একইস্থানে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির গণমিছিলের সমন্বয় করবেন আমিনুল হক ও হায়দার আলী লেলিন। এরপর নয়াপল্টন রোডে ঢাকা ব্যাংকের সামনে ছাত্রদলের গণমিছিল সমন্বয় করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইকবাল হোসেন শ্যামল, আনন্দ ভবন কমিউনিটি সেন্টারের সামনে কৃষকদলের মিছিলে সমন্বয় করবেন কেন্দ্রীয় নেতা দুলাল হোসেন।
স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলের সমন্বয় করবেন ওমর ফারুক শাফিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে হোটেল ভিক্টোরির সামনে পেশাজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা দলের মিছিলে সমন্বয় করবেন রবিউল ইসলাম রবি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মিছিল সমন্বয় করবেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক বেনজীর আহমেদ টিটো।
কড়াই গোস্তের সামনে যুবদলের মিছিল সমন্বয় করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বেলাল আহমেদ। পল্টন চায়না মার্কেটের সামনে ঢাকা জেলা বিএনপির মিছিল সমন্বয় করবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মশিউর রহমান বিপ্লব। জোনাকি হলের সামনে শ্রমিক দলের মিছিলে সমন্বয় করবেন কেন্দ্রীয় নেতা সালাউদ্দিন ভূঁইয়া শিশির। পল্টন থানার উল্টো দিকে মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল ও ওলামা দল এবং জাসাসের মিছিলে সমন্বয় করবেন আমিরুজ্জামান খান শিমুল ও শেখ মো. শামীম। ফকিরাপুল ও দৈনিক বাংলা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মিছিলে সমন্বয় করবেন কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু।
এসব স্পটে নেতাকর্মীরা জমায়েত হওয়ার পর সম্মিলিতভাবে গণমিছিল শুরু হয়ে মগবাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হবে।
গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশ প্রেসক্লাবে
বৃহস্পতিবার দুপুরে নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ কেন্দ্রীয় পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ হবে এবং সমাবেশ শেষে গণমিছিল করা হবে।
বিজয়নগরে ১২ দল, ১১ দল প্রেসক্লাবে
বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে থেকে ১২ দলীয় জোটের নেতৃত্বে গণমিছিল শুরু হবে। মিছিলটি বিজয় নগর পানির ট্যাংকির সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিংগেল পর্যন্ত গিয়ে ফিরে আসবে এবং পুরানা পল্টন হয়ে প্রেস ক্লাবে গিয়ে শেষ হবে। গণমিছিলে নেতৃত্ব দেবেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
১১ দল নিয়ে গঠিত ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’ বিকেল ৩ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু করবে। মতিঝিল শাপলা চত্বর মোড় হয়ে পুনরায় মিছিল প্রেসক্লাবে এসে শেষ হবে।
এলডিপির মিছিল কাওরানবাজার এফডিসির সামনে
এলডিপি কাওরানবাজার এফডিসির সামনে থেকে বেলা ৩ টায় গণমিছিল শুরু করে মালিবাগ মোড় গিয়ে শেষ হবে।
যা বললেন আ.লীগ সাধারণ সম্পাদক
সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার নিজ দপ্তরে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শুক্রবার ঢাকায় বিএনপির গণমিছিলকে কেন্দ্র করে ১০ ডিসেম্বরের মতোই সতর্ক পাহারায় থাকবে আওয়ামী লীগ। ঢাকাসহ সারা দেশেই এই সতর্ক পাহারা বসানো হবে। বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করবে, ভাঙচুর করবে, সেখানে কি আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ললিপপ খাব?’