সরকার ঢাকার সমাবেশ নিয়ে ভয় পেয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আমরা নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) তাদের ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ঘুম হারাম করে ফেলেছে। তারা আতঙ্কে ভুগছে। আমরা তো নয়া পল্টনে অসংখ্য সমাবেশ করেছি, যেখানে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন। কই তখন তো কোনো সমস্যা হয়নি। এখন তারা জঙ্গি নাটক শুরু করেছে। নিজেদের প্রয়োজনে জঙ্গি বানায়। নিজেরাই বাস পুড়িয়ে অগ্নিসন্ত্রাস করে। এই হচ্ছে আওয়ামী লীগ।’
শনিবার রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এখন কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তারা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা সম্পদ লুট করে পাহাড় বানাচ্ছে আর সাধারণ মানুষকে গরিব করছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যাবস্থা নেওয়া হয় না। ইসলামী ব্যাংকের টাকা নামে বেনামে ঋণের নামে লুট করছে। আওয়ামী লীগ দেশের রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের লড়াই সংগ্রামে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়েছে। পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টু সহ ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। এতোদিন পরে সাজা দিয়ে বিরোধী দলকে নির্মূল করতে চায় সরকার। কিন্তু বিরোধী দল আরও নতুনভাবে উদ্যমী হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকে ধানের শীষে রক্ত মিশেছে। এই রক্ত দূর করে ধানের শীষ পরিষ্কার করতে হবে। আমাদের আন্দোলন বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। আমাদের আন্দোলন জনগণের ভোটাধিকার ও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন। একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আন্দোলন। আমরা আর কষ্ট করবো না। এই ভয়াবহ দানব সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ঠিক থাকবে না। ১৪ বছর ধরে আমরা নির্যাতিত। ছোটো ছোটো বাচ্চাগুলো তাদের বাবা ও স্বজনদের জন্য অপেক্ষায় থাকে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, যে দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিদিন হত্যা করা হচ্ছে, সেই দেশের সরকার প্রতিদিন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের কথা বলছে। সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা কোন দেশে বাস করছি, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী খারাপ কাজ করলেও সমালোচনা করা যায় না। আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্র একটাই- যেমন করেই হোক ক্ষমতায় বসে থাকা।
তিনি বলেন, এই দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তৃতা করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
সমাবেশে আসা নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, পরিবহন ধর্মঘটের কারণে সমাবেশে যোগ দিতে বেগ পেতে হয়েছে। রাস্তায় একের পর এক পুলিশি তল্লাশির মুখেও পড়তে হয়েছে তাদের।
বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশের আগে রাজশাহী বিভাগে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। পরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও থ্রি-হুইলার যানবাহনেরও ধর্মঘট ডাকে রাজশাহী জেলা মিশুক-সিএনজি মালিক সমিতি।
এ অবস্থায় সমাবেশে যোগ দিতে গত বুধবার থেকেই বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী রাজশাহীতে আসতে শুরু করেন। পরে সমাবেশস্থলের পাশের ঈদগাহ মাঠ ও সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন অনেকে।
খুলনা গেজেট/ বিএমএস