সাম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানের কান্নাজড়িত একটি সাক্ষাৎকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তাঁর আবেগজড়িত কান্না দেশের লক্ষ কোটি মানুষের অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর আবেগঘণ কান্নাজনিত বক্তব্য প্রচারের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁকে নিয়ে সবাই ইতিবাচক মন্তব্য করছেন। অনন্য উচ্চতায় অভিষিক্ত হচ্ছেন তিনি। দেশবাসীর কাছে তার সততা দিবালোকের মতো পরিষ্কার হয়েছে। আবেগঘণ কান্নার মাধ্যমে তিনি পদ্মা সেতু নিয়ে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকাসহ দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের সমুচিত জবাব দিয়েছেন। তাঁর এ আবেগমাখা কান্না প্রমাণ করে পদ্মা সেতু নিয়ে কোন দুর্নীতি হয়নি।
২৭ মে রাতে সরাসরি প্রচারিত ‘পদ্মা সেতুর নেপথ্যের কথা’ বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান তাঁর ভেতর জমে থাকা পুঞ্জিভূত বেদনা আর আবেগ চোখের পানির মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাপ্তাহিক আয়োজন রাজনৈতিক সাতকাহন শীর্ষক ওয়েবিনারের পঞ্চম পর্বে ভার্চু্য়ালি যুক্ত হয়ে পদ্মা সেতুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কর্মযজ্ঞ নিয়ে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়।
অনুষ্ঠানে ড. মসিউর রহমান বলেন, বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেন। সংস্থাটি শুরু থেকে প্রকল্পে দুর্নীতি হচ্ছে এমন নানা ধরনের নালিশ করতে থাকে। পদ্মা সেতু নামে ইমেইল আইডি খুলে নানা জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করে এবং সেসব বেশিরভাগই ব্যক্তিগত আক্রমণ, কুরুচিপূর্ণ। পরবর্তীতে কানাডীয় আদালত পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পায়নি।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ড. মসিউর রহমানের বিরুদ্ধেও তখন বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপন করেন এবং তাকে দেশত্যাগের প্রস্তাব দেন।
ড. মসিউর রহমানের মতো একজন উচ্চশিক্ষিত, বিনয়ী, ভদ্র , সজ্জন এবং সৎ ব্যক্তির সম্পর্কে ষড়যন্ত্রমূলক একটি অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় ব্যক্তিগতভাবে তিনি এবং দেশের অনেকেই মর্মাহত হয়েছিলেন। সরকারের একজন দক্ষ এবং সৎ আমলা হিসেবে ড. মসিউর রহমানের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। ড. মসিউর রহমান প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং আস্থাভাজন। তাঁর রয়েছে পরিচ্ছন্ন ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত ক্লিন ইমেজ।
১৯৭২ হতে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একান্ত সচিব ছিলেন মসিউর রহমান। ২০০৯ সালে থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে অত্যন্ত সৎ, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা এবং সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর একজন প্রভাবশালী সদস্য, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এবং সংগঠনের উপ-কমিটির অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগের চেয়ারম্যান। একজন দক্ষ এবং কর্মঠ সরকারি আমলা হিসেবে তাঁর রয়েছে বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবন।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অনার্সসহ বিএ এবং ১৯৬৩ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ১৯৬৫ তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেন এবং চাকুরী হতে ছুটি নিয়ে ফ্লেচার স্কুল অফ ল’ এন্ড ডিপ্লোমেসি এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আইন ও সম্পর্ক বিষয়ে লেখাপড়া করেন এবং একই বিষয়ে পিএইচডি লাভ করেন।
১৯৬৫ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ৩৩ বছর তিনি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে অত্যন্ত সুনামের সাথে চাকুরী করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং সভায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর লেখা বিভিন্ন বই এবং আর্টিকেল দেশে এবং বিদেশে খ্যাতনামা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
ড. মসিউর রহমানের জন্ম ১৯৪২ সালে খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের সুগন্ধী গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে এ গ্রামেই। ১৯৫৭ সালে তিনি তৎকালীন বাগেরহাট বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ফাস্ট গ্রেড স্কলারশীপে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন। ১৯৫৯ সালে বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ থেকে ১ম বিভাগে আই এ পাস করেন। ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ বিএ এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাস করেন। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। এছাড়া হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।