জুলফিকার আলী,কলারোয়া(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ ড্রাগন চাষ করে সাড়া ফেলেছেন সাতক্ষীরার কলারোয়ার সফটওয়্যার প্রকৌশলী শাহিনুর রহমান। তিনি ২০ বিঘা বিলের জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে নিজে যেমন লাভবান হয়েছেন, ঠিক তেমনি এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছেন।
শাহিনুর রহমান কলারোয়া উপজেলার ১২নং যুগিখালী গ্রামের তরুলিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শওকাত আলীর ছেলে। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে পাস করে চাকরির পেছনে ছোটেননি।
ঢাকার শ্যামলীতে মিডিয়া সওয়ার লিমিটেড নামে সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থপনা পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন। মহামারী করোনার সময় ২০২০ সালে ইউটিউব চ্যানেল দেখে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয় শাহিনুর রহমানের। তার কৃষি কাজে আগে থেকে আগ্রহ ছিল। এরপর তার পিতার অমত ও বাধা উপেক্ষা করে প্রথমে ১০ বিঘা জমিতে মাটি ভরাট করে ড্রাগন ফল চাষের উদ্যোগ নেন তিনি। সেখানে সফলও হন। তারপর কলারোয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের পরামর্শে সম্ভাবনা দেখে তিনি আরও ১০ বিঘা মাঠের জমি ভরাট করে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। শাহিনুর রহমান ড্রাগন ফল বাগানে পাইপ লাইন স্থাপন করে সেচের ব্যবস্থা করেছেন। চারিপাশে শক্ত বেড়াও দিয়েছেন। বাগান সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
২০২১ সালের মে থেকে ২০২২সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত ড্রাগন ফল তোলা হয়। চলতি মৌসুমেও ক্ষেত থেকে গাছপাকা নিরাপদ ফল ২০০ টাকা কেজি দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সেই ব্যবসায়ীরা ফল পাঠিয়ে দিচ্ছেন সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজার, খুলনা ও ঢাকা শহরে। তিনি এ পর্যন্ত প্রায় ১৯ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। তাছাড়াও ‘ফলের আড়ৎ’ নামে শাহিনুর রহমানের একটি ফেসবুক পেজ রয়েছে। কেউ চাইলে সেখান থেকে ফলের অর্ডার দিতে পারেন।
শাহিনুর রহমানের বাবা স্কুল শিক্ষক শওকাত আলী জানান, ছেলে বুয়েট থেকে ২০১৩ সালে সিএসই বিভাগে লেখাপড়া শেষ করেছে। এখন সে সফল ব্যবসায়ী। চাকরির পেছনে না ঘুরে সফটওয়্যার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সেখানে ৩২ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে। ড্রাগন ফলের প্রকল্পে নিয়মিত ১২ জন কাজ করেন।
শাহিনুর রহমান আরও বলেন, তিনি বেশিরভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে সিসি টিভির মাধ্যমে ড্রাগন প্রকল্প পরিচালনা করে থাকেন। ড্রাগন ফলের ক্ষেত- দাম ও বাজার ভাল দেখে শাহিনুর রহমানের পিতা এখন ছেলেকে ভাল বলেন। একই সাথে ছেলের প্রকল্পটি দেখভাল করেন। সাতক্ষীরা জেলায় এটিই সবচেয়ে বড় ড্রাগন উৎপাদন প্রকল্প। এই সফলতা দেখে এখন অনেকে ড্রাগন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। ২০ বিঘার ড্রাগন বাগান আরও বাড়াতে চান এবং এ ফল বিদেশেও রফতানি করতে চান শাহিনুর রহমান।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হোসেন জানান, তার উপজেলায় ১২ জন চাষি ৩০ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ করেছেন। সাতক্ষীরা ও মেহেরপুর খামারবাড়ীর উপ-পরিচালকসহ কৃষি বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের টিম শাহিনুর রহমানের ড্রাগন ফলের চাষ পরিদর্শন করেছেন।
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুলী বিশ্বাস জানান, একটা স্বপ্ন ও একটা সঠিক সিদ্ধান্ত সমাজের চিত্র পাল্টে দিতে পারে, তরুণ উদ্যোক্তা শাহিনুর যার দৃষ্টান্ত। তার ড্রাগন বাগান নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করেছে।