খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

‘ডেল্টা’র ছোবলে বিপর্যস্ত বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ চূড়া অতিক্রম করে এলেও প্রতিবেশি বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং বিশ্বের অনেক দেশকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি করেছে সেদেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ এর অতিসংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ‘ডেল্টা’।

ভারতে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার এই ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যে বিশ্বের প্রায় একশটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে শনিবার জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস। তিনি বলেছেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টটি অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটে চলেছে।

‘নতুন এই ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি যেসব দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ভালো হয়েছে সেখানেও ছড়াচ্ছে।’

ব্রিটেনে যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে তার প্রধান কারণ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট। কিন্তু অক্সফোর্ডে রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিন ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক জেমস নেইস্মিথের বরাত দিয়ে দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ইউরোপজুড়ে এই ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়বে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর পরিণতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি।

‘উন্নয়নশীল বিশ্বে এত কম মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছেন যে তাদের সামনে চরম বিপদ অপেক্ষা করছে। ডেল্টা যখন ব্যাপকভাবে ছড়াতে শুরু করবে, দ্রুত সেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিপর্যয় তৈরি হবে, যদি না দ্রুত টিকা কর্মসূচির প্রসার না হয়।’

তিনি বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে, অক্সিজেনের অভাব দেখা দেবে এবং ডাক্তার নার্সরা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার সুযোগ সীমিত হয়ে পড়বে।

যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপকহারে টিকা কর্মসূচি অব্যাহত থাকলেও ভারতীয় বা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে সেদেশেও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোকে, বিশেষ করে ভারতের প্রতিবেশীদের।

এদিকে ভারতে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি দেখা গেলেও সেদেশে প্রথম শনাক্ত করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেকগুলো দেশে বিপজ্জনক মাত্রায় নতুন করে ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ এবং মৃত্যু।

আর এই বিপদ এমন সময় হাজির হয়েছে যখন ওই অঞ্চলের অধিকাংশ দেশেই টিকা কর্মসূচির পরিস্থিতি নাজুক। মে মাসেই নেপাল, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার প্রবণতা দেখা দেয়।

সবচেয়ে খারাপ অবস্থা হয় নেপালে। মে মাস থেকে সেদেশে এত দ্রুতহারে সংক্রমণ বাড়তে থাকে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ চরমে পৌঁছে। জুন মাসে আফগানিস্তানে সংক্রমণের সংখ্যা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি হয়ে পড়ে। সেদেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ওয়াজিদ মজরুহ বলেন, সারা দেশে যত সংক্রমণ হচ্ছে তার ৬০ শতাংশই হচ্ছে রাজধানী কাবুলে। তিনি বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের কারণে এই অবস্থা। ডব্লিউএইচও বলছে, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মঙ্গোলিয়াতেও সংক্রমণ বাড়ছে।

যে দেশটির সাথে ভারতের দীর্ঘ সীমান্ত সেই বাংলাদেশে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে নতুন করে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। সরকারি এক সমীক্ষায় দেখা গেছে ২৫ মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত রাজধানী ঢাকায় যতজন কোভিড পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে, তাদের ৬৮ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত ছিল। সংক্রমণ সামাল দিতে বাংলাদেশে এখন দেশজুড়ে কঠোর লক-ডাউন চলছে।

বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের আগেই টিকা কর্মসূচি শুরু করলেও, গতি খুবই মন্থর। ভ্যাকসিনের অভাবে এপ্রিলে টিকা দেওয়া স্থগিত করে দিতে হয়। ভারত থেকে পাওয়া এবং কেনা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১৬ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে গেলেও, ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে শুরু হয় সংকট।

চীনের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে পাওয়া কিছু ভ্যাকসিন দিয়ে ২২ জুন থেকে স্বল্প মাত্রায় টিকাদান শুরু করে বাংলাদেশ। অবশ্য সরকার বলছে তাদের কাছে সিনোফার্ম, মডার্না এবং ফাইজারের ৫৭ লাখ ডোজ টিকা এসেছে যা দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নতুন করে পুরোমাত্রায় টিকা দেওয়া শুরু হবে। তবে জুনের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৩ শতাংশেরও কম মানুষের দুই ডোজ টিকা হয়েছে।

ডব্লিওএইচওর প্রধান গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, আগামী জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিটি দেশের কমপক্ষে ৭০ শতাংশ লোককে টিকা দিতে হবে। এটাই এই প্যানডেমিক সামলানোর সবচেয়ে সবচেয়ে কার্যকরী রাস্তা। বিবিসি বাংলা।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!