খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ পৌষ, ১৪৩১ | ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  আরও ৬০ দিন বাড়ল সশস্ত্র বাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা
  রমজান ও ঈদের সম্ভাব্য তারিখ জানাল আরব আমিরাত
  দেশে একজনের শরীরে এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত : আইইডিসিআর

ডেঙ্গু : খুলনার মেয়ে দীপাকে হারিয়ে কাঁদছেন বন্ধুরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনার মেয়ে দীপান্বিতা বিশ্বাস ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন দেখতেন চিকিৎসক হবেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন। স্বপ্নকে মুঠোয় পুরতে পরিশ্রম করেছেন। তাই তো লাখো শিক্ষার্থীর সঙ্গে ভর্তিযুদ্ধে লড়ে সুযোগ পান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। কিন্তু ডেঙ্গু প্রথম বর্ষের এ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। গত সোমবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীপান্বিতা বিশ্বাস মারা গেছেন।

‘বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ, পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী বস্তু’– এ সত্য মেনে নিলেও মনকে বুঝ দিতে পারছেন না অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মেয়ের ইচ্ছা ছিল চিকিৎসক হয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। কিন্তু কোনো স্বপ্নই পূরণ হলো না। তার নিথর দেহ নিয়ে বাড়ি ফিরতে হলো। এ শোক সইবো কী করে? আমার সব শেষ হয়ে গেল!’

দীপান্বিতার পরিবারের সদস্যরা জানান, এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন দীপান্বিতা।

দীপান্বিতার বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশা থানার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। অমল কৃষ্ণ বিশ্বাস ও দীপ্তি বিশ্বাসের দুই সন্তানের মধ্যে দীপান্বিতা ছিল ছোট। তাঁর বেড়ে ওঠা খুলনায়। সেখানেই এসএসসি ও এইচএসসি শেষে মেডিকেল পড়ার সুবাদে ঢাকায় বসবাস করছিলেন।
অমল কৃষ্ণ পল্লী বিদ্যুৎ খুলনা অফিসের কর্মকর্তা ছিলেন। গত বছর অবসরে গেছেন। স্ত্রীকে নিয়ে তিনি খুলনায় থাকেন। বড় ছেলে চাকরির সুবাদে কলকাতা থাকেন।

দীপান্বিতা বিশ্বাসের শিক্ষক বাপ্পি সুর বলেন, ‘খুলনার একটি সরকারি হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ থেকে এইচএসসিতে গোল্ডেন প্লাস পায় দীপান্বিতা। চিকিৎসক হওয়ায় স্বপ্ন থেকে সে নিজেকে প্রস্তুত করে এবং এমবিবিএস ২০২২-২৩ সেশনে ১৪১ নম্বর পেয়ে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়। ভর্তির পর পড়ালেখার চাপে সে গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারেনি। এখন ফিরল তার লাশ। দীপান্বিতা শিক্ষকদের খুব সম্মান করত। তার মুখে হাসি লেগেই থাকত। তার এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না।’

দীপান্বিতার সহপাঠী স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাদমান কবির বলেন, ‘কিছুটা আত্মমুখী হলেও দীপান্বিতা ছিল ঠান্ডা মেজাজ, আন্তরিক ও মেধাবী। ডেঙ্গু ধরা পড়ার পর মেডিকেলের হলে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।’ আরেক সহপাঠী রিদয় চন্দ্র পাল বলেন, ‘দৃঢ় স্বপ্নের অধিকারী ছিল দীপান্বিতা। চিকিৎসক হয়ে আমরা তাঁর স্বপ্ন পূরণে কাজ করব।’

দীপান্বিতার মৃত্যুতে পরিবার, শিক্ষক ও সহপাঠীদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবরে হলের সিনিয়র-জুনিয়র ও সহপাঠীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। তারা দীপান্বিতার আত্মার শান্তি কামনা করেন।

মঙ্গলবার দীপান্বিতার মৃত্যুতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেলের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নূরুল হুদা লেলিন গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় আজ বুধবার প্রতিষ্ঠানে শোক সভা হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ৮৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে তিনজন মেডিকেল শিক্ষার্থী এবং চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। গত ২৩ আগস্ট সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের পঞ্চম ব্যাচের শিক্ষার্থী বায়েজিদ আহমেদ মারা যান ডেঙ্গুতে। জুলাইয়ে একই ব্যাচের সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার মৃত্যু হয়। আর চার চিকিৎসক হলেন– শরীফা বিনতে আজিজ, আলমিনা দেওয়ান মিশু, এম আরিফুর রহমান ও ফাতেমা-তুজ-জোহরা রওনক।

 

খুলনা গেজেট/হিমালয়




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!