খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ডুমুরিয়ার আড়তে ফুলকপির কেজি চার টাকা

কাজী মোতাহার রহমান

ডুমুরিয়ার মালতিয়া গ্রামের চাষী আব্দুল মজিদ আড়তে এসে হতাশ হয়েছেন। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন একই উপজেলার আরশনগর গ্রামের সঞ্জয় দেবনাথ। তারা উভয়ই ফুলকপি চাষি। বুধবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে মালতিয়া আড়তে তারা প্রতিকেজি ফুলকপি বিক্রি করেছে চার টাকা দরে। সব্জির রাজ্য ডুমুরিয়ায় এবার ফুলকপির বাম্পার উৎপাদন। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক ইঞ্চি জায়গাও খালি রাখেনি ডুমরিয়ার শত-শত কৃষক।

মার্চে করোনার দুঃসংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়শ, পেঁপে, লাউ, পুঁইশাক চাষি বড় ধরণের লোকসানের সম্মুখিন হয়। শষা প্রতি কেজি বাকিতে বিক্রি করে পাঁচ টাকা কেজি দরে। কাঁচা মরিচ ও উচ্ছে পানির দামে বিক্রি হয়। কৃষক ঋণী হয়ে পড়ে। করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে প্রধানমন্ত্রী এক ইঞ্চিও জমি খালি না রাখতে নির্দেশনা দেয়। চাষে উৎসাহিত করতে খুলনার এক হাজার তিনশ’ কৃষক প্রণোদনা পায়। খুলনা জেলার ৮০ হাজার কৃষক গ্রীষ্ম মৌসুমে সব্জি বিক্রি করতে না পেরে ঋণী হয়ে পড়ে। আশা ও গ্রামীন ব্যাংক সমিতিতে সুদসহ ঋণের বোঝা বাড়তে থাকে।

ডুমুরিয়ার বরাতিয়া, গোবিন্দকাটি, ঠাকুন্দিয়া, খর্নিয়া, আরশনগরে শত-শত বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। নভেম্বরের প্রথমদিকে চাষিরা প্রতি কেজি ফুলকপি ৮০ টাকা দরে বিক্রি করে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য ছিল ৪০ টাকা। আজ কৈয়া বাজার, খর্নিয়া ও মালতিয়া আড়তে প্রতি কেজির মূল্য ছিল চার টাকা। স্থানীয় সূত্র জানান, বরাতিয়া, চাকুন্দিয়া, রুস্তমপুর, আরশনগর ও মালতিয়ায় ফুলকপির বাম্পার ফলন। গতবারের চেয়ে বেশি জমিতে উৎপাদন হয়েছে।

বরাতিয়া গ্রামের ললিত দাস খুলনা গেজেটকে  জানান, এক বিঘা জমিতে ছয় হাজার আর দশ কাঠা জমিতে তিন হাজার ফুলকপির আবাদ করেছেন। বীজ, সার, কীটনাশক ও দৈনিক শ্রমিকের ব্যয়সহ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। অক্টোবরের প্রথমদিকে ফুলকপির চারার গোড়ায় পঁচন ধরে। আবাদ রক্ষা করতে নানা উপকরণ ব্যবহার করতে হয়। সব্জির আবাদ করতে যেয়ে মহাজনদের কাছ থেকে তিনি পাঁচ টাকা সুদে ঋণ নিয়েছেন। তার জমিতে ফুলকপির বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। বড় আশা ছিল গ্রীস্মকালীন সব্জিতে করোনায় ধাক্কায় লোকসান সামলে নিতে পারবেন। ফল হলো উল্টা। আজ সাড়ে চার মন ফুলকপি বিক্রি করেছেন। কাংখিত দাম পাননি।

আরশনগর গ্রামের সঞ্জয় দেবনাথ আশা ও গ্রামীন সমিতি থেকে এক লাখ টাকা ঋন নিয়েছেন। তিনি আজ মালতিয়া বাজারে ১০ মন ফুলকপি বিক্রি করতে আসেন। প্রতি কেজির মূল্য চার টাকা দেখে হতাশ হয়েছেন।

মালতিয়া গ্রামের কাজী মজিদ খুলনা গেজেটকে  জানান, একই গ্রামের লতিফ গাজী, শুভঙ্কর কুন্ডু, তফসে শেখ দুই বিঘা করে জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। মজিদ কাজী মালতিয়া আড়তে আজ কেজি প্রতি চার টাকা দরে কপি বিক্রি করেছেন। তিনি আশঙ্কা করেছেন জানুয়ারিতে ফুলকপি, সিম, টমেটো ক্ষেতেই থাকবে। দিনমজুর ও উৎপাদন খরচ না ওঠায় কৃষক এসব সব্জি বাজারে আর আনবে না। ফুলকপির আবাদ করে গোবিন্দকাটি গ্রামের মো: হাবিবুর রহমান, লিটন মোড়ল, আবু সাইদ, কানাই মল্লিক, রমেশ সরকার, কিংকর বশাক ও ঠাকুন্দিয়া গ্রামের আব্দুল জলিল গাজী লোকসানের সম্মুখিন হচ্ছেন। এসব চাষিরা জানিয়েছেন ক্ষেত্রবিশেষ দু’একদিন ছয় টাকা কেজি দরেও বিক্রি হয়। চাষিরা হাতাশার কথা ব্যক্ত করে বলেন, করোনার ক্ষতি পোষানো গেল না, তারপরে শীতের সব্জি আবাদ করে লোকসান ও ঋণী হতে হয়েছে।

 

খুলনা গেজেট /এমএম




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!