খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ মাঘ, ১৪৩১ | ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  নগরীর শেখপাড়া তেতুলতলায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী অর্নব কুমার সরকার গুলিতে নিহত
মার্চে ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ৭

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মতপ্রকাশের অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন: অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল

গেজেট ডেস্ক

প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক শামসুজ্জামানকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। যেভাবে শামসুজ্জামানকে বাসা থেকে তুলে আনা হয়েছে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানো হয়েছে, তাকে মতপ্রকাশের অধিকারের ভয়ানক লঙ্ঘন আখ্যায়িত করেছে সংস্থাটি।

শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল অবিলম্বে প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, যিনি বর্তমানে বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আটক রয়েছেন।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ২০১৮ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ভিন্নমত প্রকাশকারী ব্যক্তিদের দমন এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করতে এটা ব্যবহার করছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতিবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়াররা বলছেন, শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে যেসব ধারায় মামলা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোসহ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারাগুলোর মধ্য দিয়ে বিস্তৃত পরিসরের বক্তব্যকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। তাঁরা বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশ সরকারকে ব্যক্তিকে তাঁর ব্যক্তিগত মতপ্রকাশের জন্য অন্যায্যভাবে শাস্তি দেওয়ার বড় সুযোগ করে দিয়েছে।

অ্যামনেস্টি বলেছে, বাংলাদেশে নাগরিকেরা নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছেন। এর মধ্যে গুম, স্বেচ্ছাচারী আটক ও নির্যাতনের ঘটনা রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালী ব্যক্তি বা সরকারের সমালোচনার জন্যই তা হয়ে থাকে।

মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও এখানে সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের জন্য শাস্তির মুখে পড়ছেন। এই প্রেক্ষাপটে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল বা মানবাধিকারের আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সংগতি রেখে সংশোধন এবং এই আইনের আওতায় আটক অপর ব্যক্তিদের মুক্তি দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

মার্চে ১০ মামলায় গ্রেপ্তার ৭

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, মার্চে এই আইনের অধীনে ১০টি মামলায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই আইনে মামলা হয় ৫টি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সুলতানা কামালের সই করা প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, তারা ১০টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে এবং স্থানীয় মানবাধিকারকর্মীদের মাধ্যমে তা যাচাই করেছে।

সংস্থাটি বলছে, মার্চে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে ৭টি হয়েছে সমালোচনামূলক পোস্ট, শেয়ার এবং কমেন্টের মাধ্যমে দেশ ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণের অভিযোগে। প্রতারণার অভিযোগে হয়েছে দুটি মামলা। ভয়ভীতি, জনগণের অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। হুমকি, জনমনে আতঙ্ক এবং বিশৃঙ্খলার অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে, প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামান শামসের বিরুদ্ধেই হয়েছে দুটি। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বিএনপির এক কর্মী, আওয়ামী লীগের এক কর্মী, এক অভিনেত্রী, ২ যুবক এবং এক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) হেফাজতে ওই সরকারি কর্মচারী মারা যান।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই আইনের যথেচ্ছ অপব্যবহারের মাধ্যমে জনগণকে তাদের মতপ্রকাশে বিরত রাখতে এবং সবাইকে ভয়ভীতি ও স্তব্ধ করার জন্য একটি ভয়ানক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।

সংস্থাটির মতে, মার্চে অন্তত ৪০ জন সাংবাদিক তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে লাঞ্ছিত, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

গত ১৭ মার্চ যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাই মাহিনুর আহমেদ খান ঢাকার মিরপুরে দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হন।

সাংবাদিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের সম্পৃক্ততা দেখা যায় বলেও জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থাটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মার্চে ৫টি মামলায় বিএনপি-জামায়াতের ২ নারীসহ ১৭০ জন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মার্চে একজন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। একই ঘটনায় গুরুতর আহত হন আরও একজন।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৩টি।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, মার্চে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে এক নারীসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে একজন অভিযুক্তের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত এবং অগ্রহণযোগ্য বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, মার্চে কারা হেফাজতে ৬ জন মারা যান, যাদের বাইরে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!