ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার সাংবাদিক তানভির হাসান তানু অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাকে হাজত থেকে হাসপাতালে নিয়েছে সদর থানা পুলিশ।
শনিবার (১০ জুলাই) দিবাগত রাত একটার দিকে তানুর শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। পরে তাকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীরুল ইসলাম।
সাংবাদিক তানুর পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ তারিখেই তিনি করোনা থেকে সুস্থ হন। তবে, এখনও তিনি শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করছেন। তাকে নিয়মিত ওষুধ খাওয়ানো হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তানভীরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক তানু হঠাৎ শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করেন। দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তাকে হাসপাতালে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিই।
সাংবাদিক তানভির হাসান তানু শহরের হাজীপাড়া এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। তিনি ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন, দৈনিক ইত্তেফাক ও জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি। এছাড়াও তিনি ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক ও ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ৯ জুলাই ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫(১)(ক) ২৫(১)(খ) ২৯(১)/৩১(১)/৩৫(১) ধারায় সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মামলায় তানভির হাসান তানু, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ, বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটুকে আসামি করা হয়। এছাড়া অজ্ঞাত ব্যক্তিদেরও আসামি করা হয়।
মামলার বরাতে ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গত ৫ ও ৬ জুলাই ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের খাবার নিয়ে জাগোনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, রহিম শুভ ও আব্দুল লতিফ লিটু।
সংবাদটি ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, জনরোষ সৃষ্টিকারী ও মানহানিকর’ দাবি করে ৯ জুলাই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, রহিম শুভ ও আব্দুল লতিফ লিটু এবং অজ্ঞাত কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে সাংবাদিক তানভির হাসান তানু ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।
এদিকে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা ও সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব, ঠাকুরগাঁও টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বস্তরের সাংবাদিক মহল।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও প্রেস ক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বলেন, করোনা মহামারি মোকাবিলায় অপ্রতুল পদক্ষেপের কথাগুলো সাংবাদিকরা তুলে ধরছেন এবং পুনর্গঠনের পথ খুঁজে পেতে আলোচনার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। এ সময় গণমাধ্যমের ওপর আঘাত আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকে বিপন্ন করবে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলার পর এক সাংবাদিককে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে মামলা প্রত্যাহার ও তানুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাকরুদ্ধ করতে চায় একটি গোষ্ঠী। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এবং ব্যক্তিস্বার্থে যারা এ আইনের চরম অপব্যবহার করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক তানভির হাসান তানুর নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানান সাংবাদিক নেতারা।