আকাশ ও সোহেল নামের দু’জনের পরিকল্পনায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সোয়া ১১ কোটি টাকা লুট হয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপি ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ।
ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, টাকা লুটের ঘটনায় আকাশকে খুলনা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও সোহেল পলাতক। তিনি গোয়েন্দাদের জালে আছেন। আর গ্রেপ্তার আকাশ মূল মাস্টারমাইন্ড বলে জানান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডাকাতির ঘটনায় আকাশ ছাড়াও হৃদয় ও মিলন নামের আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ডিএমপি ডিবিপ্রধান জানান, কড়াইল বউ বাজার এলাকা থেকে হৃদয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় ৪৮ লাখ ৭ হাজার টাকা। তার তথ্যে নেত্রকোণার দুর্গাপুর থেকে মিলন নামে আরেকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছে পাওয়া যায় ১০ লাখ টাকা। এই দু’জনের কাছ থেকে ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
তিনি জানান, পরিকল্পনাকারীদের একজন আকাশকেও গ্রেপ্তার করেছে ডিবি।
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আকাশ ও সোহেল রানা ছিল এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড। আকাশ গ্রেপ্তার হয়েছে। সোহেল রানা আমাদের জালে রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কেউ পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল-সিম কিনেছে, কেউ ছিল শুধু কামলা। আকাশ এবং সোহেল ডাকাতির ছকটি সাজায়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সোহেল তার বন্ধু ইমনকে জানায়। ইমন সেটা শেয়ার করে সানোয়ারের কাছে। সানোয়ারের দায়িত্ব ছিল কামলা সংগ্রহের, যাদের নামে একাধিক মামলা আছে, যারা বিভিন্ন ডাকাতির ঘটনায় আগেও কামলা হিসেবে কাজ করেছে। যাদেরকে আনা হয়েছিল তাদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা রয়েছে।
‘সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণা থেকে ৮ জন কামলাকে ভাড়া করে নিয়ে আসে। সিম ও মোবাইলগুলো আনার দায়িত্ব ছিল কামলাদের ওপর। ওয়ান টাইম ব্যবহারের জন্য সিম ও মোবাইলগুলো কেনা হয়। দুই মাস্টারমাইন্ড ডাকাত দলের অন্য সদস্যদের বলেছে, হুন্ডির একটা টাকা প্রশাসনের লোকদের সঙ্গে নিয়ে ধরবে। টাকার পরিমাণ হবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা।’
হারুন অর রশীদ বলেন, ‘কামলাদের ১০-১৫ হাজার টাকা করে দেয়ার কথা ছিল। এই বলে নেয়া হয়। আমরা সিসিটিভিতে দেখেছি, টাকাগুলো অন্য গাড়িতে নেয়ার সময় মাইক্রোবাসে উঠতে পারেনি আকাশ। সে অন্যদিকে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন কামলাসহ অন্যরা আতঙ্কিত হয়ে যায়। ভেবে নেয়, আকাশ ধরা পড়েছে। তখন তাড়াহুড়ো করে ৩০০ ফিট গিয়ে তাদের কাছে যে ব্যাগগুলো ছিল, সেগুলোতে টাকা ভরে নেয়। ট্রাংকগুলো নিতে পারছিল না। কারণ তাদের কাছে অন্য কোনো গাড়ি ছিল না।’
কী হয়েছিল?
রাজধানীর উত্তরায় গত ৯ মার্চ সকালে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেসরকারি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকাবাহী একটি গাড়িতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে বলে জানায় পুলিশ।
সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘটা ওই ঘটনায় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে কর্তৃপক্ষের বরাতে জানান তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মওদুদ হাওলাদার।
তুরাগ থানার এক কর্মকর্তা জানান, উত্তরার দিয়াবাড়ীর ১৬ নম্বর সেক্টরে ব্রিজের কাছে একটি গাড়ি থেকে ট্রাংকভর্তি ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয় অজ্ঞাত অস্ত্রধারীরা। মাইক্রোবাসটি মিরপুর ডিওএইচএস থেকে আশুলিয়ার দিকে যাচ্ছিল।
তিনি জানান, ডাচ-বাংলার টাকা মানি প্ল্যান্ট সিকিউরিটি কোম্পানি নামে একটি প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন কর্মী নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে কালো রঙের একটি হাই-এইস মাইক্রোবাসে ৮ থেকে ১০ অস্ত্রধারী টাকা বহন করা মাইক্রোবাসটি থামিয়ে টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
খুলনা গেজেট/এনএম