খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ মাঘ, ১৪৩১ | ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  চট্টগ্রামের৷ রাউজানে ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
  টেকনাফ থেকে অপহরণের শিকার ১৫ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ, আটক ২
  বাংলাদেশের পট পরিবর্তন অন্যদের জন্য শিক্ষণীয় : প্রধান উপদেষ্টা
  অনন্তকাল সংস্কার চলবে কিন্তু নির্বাচন হবে না, এমনটি হতে পারে না : রিজভী

ধানের গোলা, কবরস্থান থেকে উদ্ধার ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের লুট হওয়া ৮ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর তুরাগ থানার দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে লুট হওয়া ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি টাকার মধ্যে ৮ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব টাকা পাওয়া গেছে ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রামের বাড়ির ধানের গোলা, কবরস্থান, পয়োবর্জ্যের কূপ, শহরে আত্মীয়স্বজনদের বাসাবাড়ি এবং নিজেদের বাসার শৌচাগারের ওপর থেকে।

এই ডাকাত দলের ১৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে ১০ জন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁরা সবাই এখন কারাগারে আছেন। কার পরিকল্পনায় কীভাবে এই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল, লুটে নেওয়া টাকা কীভাবে ভাগবাটোয়ারা করে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল, তা ওই ১০ জনের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে।

মামলার কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, ডাকাত দলের সদস্য মিলন মিয়ার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুরের উরফি পশ্চিমপাড়ায়। দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা মিলন ঢাকায় স্যানিটারি মিস্ত্রির কাজ করেন বলে জানতেন তাঁর গ্রামের লোকজন। সম্প্রতি ঢাকা থেকে পুলিশ মিলন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর গ্রামের বাড়িতে যায়। পরে তাঁর বাড়ির ধান রাখার গোলার ভেতর থেকে প্লাস্টিকের একটি বস্তা বের করে পুলিশ। সেই বস্তায় পাওয়া যায় ১০ লাখ টাকা।

টাকা উদ্ধারের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ওই গ্রামের কৃষক মোমেন আলী। তিনি  বলেন, ‘আমাদের গ্রামের পোলা মিলন মিয়া গরিব মানুষ। কিন্তু পুলিশ তাঁর বাড়ির ধানের গোলা থেকে এত টাকা বের করার পর আমরা সবাই অবাক হয়ে যাই।’ তখন পুলিশ জানিয়েছিল, ঢাকায় ব্যাংকের টাকা ডাকাতি হয়েছে। সেই টাকার ভাগ বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন মিলন।

এক মাস আগে (৯ মার্চ) মানি প্ল্যান্ট লিংক নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা রাজধানীর মিরপুরের ডিওএইচএস এলাকা থেকে মাইক্রোবাসে করে টাকা নিয়ে সাভারের ইপিজেড এলাকায় ডাচ্‌–বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে দিতে যাচ্ছিলেন। তাঁদের গাড়ি তুরাগ থানার দিয়াবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস পথ আটকায়। তখন মানি প্ল্যান্টের কর্মীদের মারধর করে ওই গাড়িতে থাকা ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান ডাকাত দলের সদস্যরা।

এই মামলার তদন্ত তদারক করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাইফুল ইসলাম। তিনি  বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত লুট হওয়া ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ৫ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করতে পেরেছি। বাকি ৩ কোটি ২০ হাজার টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’

গত ৩০ মার্চ গোপালগঞ্জের কাজলীয়া ইউনিয়নের পিঠাবাড়ী গ্রামের একটি তরমুজের খেত থেকে হাবিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর ডিবির একটি দল। পরে তাঁকে নিয়ে হরিদাসপুর ফকিরপাড়ায় হাবিবুরের গ্রামের বাড়িতে যান পুলিশ সদস্যরা।

হাবিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাঁদের বাড়ির পেছনের কবরস্থানের পাশে মাটি খুঁড়ে একটি পলিথিনের প্যাকেট বের করা হয়। সেই প্যাকেটে পাওয়া যায় ছয় লাখ টাকা।

এ ছাড়া হাবিবুরদের বাড়ির শৌচাগারের পয়োবর্জ্য সংরক্ষণাগারে (স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা কূপ) একটি পলিথিনের প্যাকেটে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল পাঁচ লাখ টাকা। ওই টাকা হাবিবুর নিজেই বের করে আনেন বলে জানিয়েছেন ডিবি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। মামলার আলামত হিসেবে উদ্ধার হওয়া ডাকাতির এসব টাকা জব্দ করা হয়েছে।

ওই টাকা উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ওই গ্রামের বাসিন্দা হিটলার শেখ। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতাম, হাবিবুর গাড়ি চালায়। কিন্তু তাঁর কাছে এত টাকা কীভাবে পাওয়া গেল, আর সে এগুলো কীভাবে লুকিয়ে রেখেছিল তা জানার পর এলাকার লোকজনের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।’

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সাগর মাতব্বর ও আকাশ মাতব্বরের ঢাকার দক্ষিণখানের ভাড়া বাসার শৌচাগারের ওপরের জায়গা থেকে ডাকাতির ১ কোটি সাত লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। বাসার মালিক বেলাল উদ্দিন  বলেন, ‘আমার জানতাম সাগর ও আকাশ গাড়ি চালান। আমাদের বাসার এক ভাড়াটিয়ার ছেলে–মেয়েদের উত্তরার স্কুলে আনা–নেওয়া করতেন।’

পুলিশের তদন্ত অনুযায়ী, এই ডাকাতির অন্যতম পরিকল্পনাকারী বরিশালের সোহেল রানা ওরফে শিশির। ডাকাতির ছয় লাখ টাকা সোহেলের পল্লবীর ভাড়া বাসার ওয়ার্ডরোব থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ডাকাতির আরও ৮১ লাখ টাকা সোহেলের বোন শিরিন বেগমের সাভারের হেমায়েতপুরের বাসার ওয়ারড্রব থেকে উদ্ধার করা হয়।

ডাকাতির আরেক পরিকল্পনাকারী আকাশ আহমেদ ওরফে বাবুল। তিনি লুটের ২০ লাখ টাকা দিয়ে একটি মাইক্রোবাস কেনেন। তাঁর সেই গাড়িটি খিলক্ষেতের একটি বাসা থেকে জব্দ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া খিলক্ষেতে আকাশের বাসার আলমারি থেকে চার লাখ এবং মিরপুর–১ নম্বরে তাঁর স্ত্রীর খালাতো লিপি বেগমের বাসার ওয়ারড্রব থেকে আরও ৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা জব্দ করে পুলিশ। লিপি বেগম বলেন, আকাশ পুরোনো খবরের কাগজে মোড়া একটি বান্ডিল তাঁর কাছে রাখতে দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ এসে তা উদ্ধার করে নিয়ে গেছে।

গ্রেপ্তার সানোয়ার হাসানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বনানীর একটি ফ্ল্যাট গিয়ে একটি ট্রলি ব্যাগ থেকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ। আরেক আসামি ইমন ওরফে মিলনের ভাটারার বাসার ওয়ার্ডরোব থেকে ৩২ লাখ ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জের হৃদয় থাকতেন বনানীর কড়াইল বস্তিতে। ডাকাতির ৪৮ লাখ টাকা তিনি ওই বস্তিতে থাকা শাশুড়ি মরিয়মের বাসার মাচার ওপরে রাখা বস্তার ভেতরে লুকিয়েছিলেন।

এর আগে ডাকাতির দিনই রাজধানীর খিলক্ষেতের লা মেরিডিয়ান হোটেলের সামনের রাস্তা থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত গাড়ি এবং সেখান থেকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা উদ্ধার করে পুলিশ।

এ মামলায় গ্রেপ্তার ১৩ জনই আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁরা আদালতে দাবি করেছেন, তাঁদের মক্কেলরা সবাই নির্দোষ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!