আসন্ন ঈদে ট্রেনের শতভাগ টিকিট অনলাইনে দেওয়ার সিদ্ধান্তে সাধারণ যাত্রীরা চরম ক্ষুব্ধ হয়েছে। ঈদ যাত্রায় তাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে বলে রেল কর্মকর্তারাও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। কারণ যাত্রীদের বিরাট একটি অংশ অনলাইন টিকিটিংয়ে অভ্যস্ত নয়। তাই বিনা টিকিটেই যাত্রীরা ট্রেন ভ্রমণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, ৭ এপ্রিল থেকে ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হবে। বিনা টিকিটে কাউকে স্টেশন ও ট্রেনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, অনলাইনে শতভাগ টিকিট প্রদান মানেই সব শ্রেণির যাত্রীদের জন্য কল্যাণকর। কারণ, সীমিত টিকিটে প্রত্যাশিত যাত্রী বহন সম্ভব নয়। সীমিত টিকিটের বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ স্টেশনে দিনের পর দিন অপেক্ষা করে। এখন অনলাইনে যারা টিকিট পাবেন না, তারা অন্য কোনো উপায়ে ভ্রমণ করবেন। কাউন্টারের সামনে অনিশ্চয়তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। আমরা যাত্রীদের সেবা দিতে চাই এবং দুর্ভোগ কমাতে চাই। টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণ নিশ্চিত করতে চাই।
ট্রেনে ভ্রমণ করেন এমন বহু যাত্রী জানান, অনলাইনে টিকিট বিক্রি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু বিগত সময়ে অনলাইন ও কাউন্টার উভয় দিক থেকে টিকিট কাটা যেত। এতে প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা সাধারণ যাত্রীরা কাউন্টার থেকে টিকিট কাটতে পারত। ১ মার্চ থেকে এনআইডি নম্বর নিবন্ধনের মাধ্যমে কাউন্টার থেকেও টিকিট কাটা যেত। কিন্তু ১ এপ্রিল থেকে আর এ সুযোগ থাকছে না।
ক্ষুব্ধ যাত্রীদের অনেকে জানান, যাদের মোবাইল ফোন ছিল না, তারা অন্যের সহযোগিতায় এনআইডির মাধ্যমে নিবন্ধন করতে পারতেন। কাউন্টারে গিয়ে নিবন্ধন নাম্বার জানিয়ে সহজে টিকিট কাটতে পারতেন। এখন মোবাইল ফোন অথবা কম্পিউটারের মাধ্যমে নিজের টিকিট নিজে কাটতে হবে। যা, অধিকাংশ সাধারণ যাত্রীদের পক্ষে সম্ভব নয়। রাজশাহীগামী যাত্রী জিল্লুর রহমান জানান, যুগের পর যুগ কাউন্টার থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে ভ্রমণ করে আসছি। ৭৭ বছর বয়সি জিল্লুর বলেন, নামেমাত্র তার একটি মোবাইল ফোন আছে, ঠিকমতো কলই করতে পারি না। টিকিট কি করে কাটব?
ক্ষোভ প্রকাশ করে রেলযাত্রী নাজমুল হাসান বলেন, একটি গোষ্ঠী নতুন পদ্ধতিতে সহজে টিকিট কাটতে পারলেও সাধারণ যাত্রীদের বড় একটি অংশ বঞ্চিত হবে। এ ছাড়া অনলাইনে টিকিট কাটতে গেলে টিকিটপ্রতি ২০ টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হবে। সাধারণ মানুষ যারা প্রযুক্তি বোঝে না-তারা পরিচিত কাউকে দিয়ে টিকিট কাটালেও ২০ টাকা অতিরিক্ত দিতে হবে। প্রতিদিন ২৯ হাজার টিকিট অনলাইনে বিক্রি হলে অনলাইন চার্জের পরিমাণ হবে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
ঢাকা রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ডিআরএম) সফিকুর রহমান জানান, যাত্রীসেবা বাড়াতে প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রতি ঈদে হাজার হাজার যাত্রী স্টেশনে জটলা করে রাত-দিন কাটান। কেউ টিকিট পান, কেউ পান না। এখন আর এমনটা হবে না। এ ছাড়া ঈদ যাত্রায় অধিকাংশ রেল কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকিট বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে হতো। এখন যাত্রীসেবা ও নিরাপত্তা রক্ষায় আমরা একযোগে কাজ করতে পারব।
সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষ্যে আগামী ৭ এপ্রিল থেকে প্রতিদিন শুধু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ৩৭টি আন্তঃনগর ট্রেন ছেড়ে যাবে। এসব ট্রেনে ২৬ হাজার ৮৮১ জন যাত্রী ভ্রমণ করতে পারবে।
নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শত চেষ্টায়ও বিনা টিকিটের যাত্রীদের রোধ করা সম্ভব হয় না। তবে এবার এ নতুন পদ্ধতির কারণে বিনা টিকিটের যাত্রীর সংখ্যা আরও বাড়বে। সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ট্রেনের ছাদ অথবা ইঞ্জিনের দুপাশে যাত্রী উঠা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকলেও তা কখনো রোধ করা যায় না। এখন অনলাইনে শতভাগ টিকিট কাটার ব্যবস্থা রাখায়, সাধারণ যাত্রীরা আরও বেশি সহিংস হয়ে উঠতে পারে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক (ডিজি) প্রকৌশলী কামরুল আহসান জানান, যাত্রীদের অনলাইন থেকেই টিকিট কাটতে হবে। আমরা টিকিটধারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, বিনা টিকিটে ভ্রমণ দণ্ডনীয় অপরাধ। বিনা টিকিট রোধে স্টেশন ও ট্রেনে বিশেষ অবস্থানে থাকবে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রেল স্টেশন কাউন্টার থেকে এখন শুধু মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হবে। এসব ট্রেনের টিকিট আগে প্রিন্ট করা থাকে। রেলের তথ্য-এসব ট্রেনের আসন সংখ্যার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ টিকিট বিক্রি হয়।
প্রসঙ্গত, ৭ এপ্রিল থেকে ঈদ যাত্রার অগ্রিম টিকিট অনলাইনে বিক্রি শুরু হবে। ৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৭ এপ্রিলের টিকিট। এভাবে ৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল দেওয়া হবে ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল দেওয়া হবে ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল দেওয়া হবে ২১ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট। এবার ঈদ যাত্রায় ৯ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেল। ফিরতি টিকিট ১৫ এপ্রিল দেওয়া হবে ২৫ এপ্রিলের, ১৬ এপ্রিল দেওয়া হবে ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল দেওয়া হবে ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল দেওয়া হবে ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল দেওয়া হবে ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল দেওয়া হবে ৩০ এপ্রিলের টিকিট। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হবে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনসহ ৪৪৮টি স্টেশন কাউন্টার থেকে কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না।