যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের সাবেক স্পিকার ও প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি আরও আগেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতেন তাহলে তার দল গত মঙ্গলবারের ভোটে আরও ভালো করতে পারতো।
“প্রেসিডেন্ট আগে সরলে হয়তো অন্য প্রার্থীরা নির্বাচনের দৌড়ে আসতো,” মিজ পেলোসিকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে।
“প্রত্যাশা ছিল যে প্রেসিডেন্ট সরে দাঁড়ালে উন্মুক্ত প্রাইমারি হবে।”
উন্মুক্ত প্রাইমারিতে কয়েক মাস ধরে প্রচারণা ও বিতর্কে অংশ নেয়ার মাধ্যমে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করার সুযোগ পায় দল। সাধারণত ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলে দল প্রাইমারির আয়োজন করে না এবং সে কারণে জো বাইডেন যখন দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচন করার ঘোষণা দেন তখন তার দল আর অন্য কাউকে আর বিবেচনায় আনেনি।
নির্বাচনের চার মাস আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে বিতর্ক বিপর্যয়ের পর মি. বাইডেন যখন সরে দাঁড়ান তখন দল দ্রুত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে প্রার্থী করতে একমত হয়।
সে সময় দ্রুত মিজ হ্যারিসকে এনডোর্স বা প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছিলেন জো বাইডেন। ন্যান্সি পেলোসি তারও সমালোচনা করেছেন। যদিও একই সঙ্গে বলেছেন তখন আর প্রাইমারি আয়োজন করা সহজ ছিল না।
পেলোসি অবশ্য বলেছেন যে তিনি বিশ্বাস করেন কমালা হ্যারিস প্রাইমারিতে ভালো করতেন এবং শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে বের হয়ে আসতেন। তিনি এও মনে করেন এর মধ্য দিয়ে অন্য ডেমোক্র্যাট প্রার্থীও পাওয়া যেত যারা ভালো নমিনি হতে পারতেন।
টিম ওয়ালজ গভর্নর থাকছেন
কমালা হ্যারিসের চেয়ে তার রানিংমেট টিম ওয়ালজের অবস্থা কিছুটা ভিন্ন। মিজ হ্যারিজ আগামী বিশে জানুয়ারি ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দায়িত্ব শেষ করবেন। ওই দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জেডি ভান্স শপথ নিবেন।
এরপর কমালা হ্যারিস একজন সাধারণ নাগরিক হয়ে যাবেন। তিনি সেনেটে তার ক্যালিফোর্নিয়ার আসনে ফিরে যাবেন না।
তবে টিম ওয়ালজ মিনেসোটার গভর্নর হিসেবে মেয়াদের বাকি অংশ পালন করবেন। তিনি ২০২২ সালে পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখনো দুই বছর মেয়াদ বাকি আছে তার।
ওই রাজ্যে গভর্নরের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট করা নেই। সুতরাং তিনি চাইলে ২০২৬ সালে তৃতীয় মেয়াদের জন্যও নির্বাচনে লড়তে পারবেন।
এখনো কংগ্রেসের ফল চূড়ান্ত হয়নি
কয়েক মাসের তীব্র প্রচারণার পর নির্বাচন হয়ে গেলো তিন দিন আগে। ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন জিতেছেন, তেমনি রিপাবলিকান পার্টিও সেনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে যাচ্ছে।
তবে প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণ কারা নিতে যাচ্ছে তা এখনো পরিষ্কার হয়নি। যদিও মনে হচ্ছে সামান্য ব্যবধানে রিপাবলিকানরাই এগিয়ে থাকতে পারে। সেটি হলে তারা ফেডারেল সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গার নিয়ন্ত্রণ পাবে।
ক্যালিফোর্নিয়া ও ওহাইওসহ বেশ কিছু জায়গায় এখনো ভোট গণনা চলছে।
পরিবর্তনের প্রস্তুতি স্টেট ডিপার্টমেন্টে
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের আরও দু মাস বাকি। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন শুক্রবার তার সব কর্মকর্তাকে ইমেইলে একটি ‘সুন্দর, দক্ষ ও পেশাদার ক্ষমতা হস্তান্তরে’র পরিকল্পনা করতে বলেছেন।
ইমেইলে তিনি বলেছেন এই প্রক্রিয়াটি ‘যে কোনো গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান’ এবং ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ’। তিনি বলেছেন তার দফতর বিশ্বব্যাপী অবাধ, মুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে উৎসাহিত করে।
“পরবর্তী প্রশাসন তাদের নীতি ও অগ্রাধিকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিবে,” বলেছেন তিনি।
অবৈধ অভিবাসীদের ভয়
বিবিসি সংবাদদাতা বার্নড ডেবুসম্যান জুনিয়র লিখেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের পর অবৈধ অভিবাসীদের অনেকে তাদের ভয় আর অনিশ্চয়তার কথা বলেছেন। তাদের ভয় মি. ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর অনেককেই নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও পিউ রিসার্চ সেন্টারের এর তথ্য মতে যুক্তরাষ্ট্রের এখন এক কোটিরও বেশি বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসী আছে।
বলিভিয়ার গ্যাব্রিয়েলা চোরাচালানীদের গাড়িতে করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। তিনি এখন ক্লিনারের কাজ করেন। তিনি তার ভয়ের কথা জানিয়েছেন।
“এখানে আমরা যারা আছি তাদের বেশিরভাগেরই কাগজপত্র নেই। তিনি (ট্রাম্প) কী করবেন তাতো পরিষ্কার করে বলেছেন। আমার মনে হয় তারা কর্মস্থল থেকেও লোকজনকে ধরে নিয়ে যাবে।”
টেক্সাস জয়ে উল্লাস রিপাবলিকানদের
ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর ল্যাটিনো ভোটারদের রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন সম্পর্কে আলোচনা শোনা যাচ্ছে।
ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণ টেক্সাস ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি। সেখানেই সীমান্ত এলাকায় ভালো করেছে রিপাবলিকানরা। বিশেষ করে জনবহুল ক্যামেরন ও হিডালগো কাউন্টিতে।
স্থানীয়রা বলছেন নিয়ন্ত্রণহীন সীমান্ত আর অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই রিপাবলিকানদের জয়ে সহায়তা করেছে।
“আমরা খুব বিপদের মধ্যে আছি। কমিউনিটিতে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমাদের বন্ধ করতে হতো, যদিও তা সহজ ছিল না,” হিদালগো কাউন্টির রিপাবলিকান রোনালদো রদ্রিগুয়েজ বলছিলেন।
খুলনা গেজেট/এনএম