সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে কংগ্রেস।
গত ৬ জানুয়ারি ট্রাম্পের উসকানিতে ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গার পর ডেমোক্র্যাটরা এমন পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু ব্যাপক প্রতীকী ভোটের আগে ট্রাম্পের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে অস্বীকার জানিয়েছেন পেন্স। তবু ট্রাম্পকে দায়িত্ব পালনে অক্ষম ঘোষণ করে একজন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনে পেন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই প্রস্তাব পাস করা হয়েছে। যদিও এটি মেনে চলতে ভাইস প্রেসিডেন্টের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এখন দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন এই রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
বার্তা সংস্থা এএফপি ও কাতারভিত্তিক আলজাজিরা এমন খবর দিয়েছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হতে আর হাতেগোনা কয়েক দিন বাকি আছে। তবে শেষ দিনগুলোতে নিজ দল রিপাবলিকানদের কাছ থেকে তিনি সমর্থন পেয়েছেন।
সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে মাইক পেন্সের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটদলীয় সদস্যরা। কিন্তু সেই দাবি উড়িয়ে দিয়ে পেন্স বলেন, আমি মনে করি না, এই পথে এগিয়ে যাওয়ার মধ্যে আমাদের দেশের জন্য সর্বোচ্চ স্বার্থ রয়েছে।মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের কয়েক ঘণ্টা আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে পেলোসিকে এক চিঠিতে এ কথা বলেন।
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জানান, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ২৫তম সংশোধনী কার্যকর করবেন না। এটি ভয়ঙ্কর নজির তৈরি করবে। এই চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর পেলোসি দ্রুতই তার ব্যবস্থাপককে অভিশংসন বিতর্ক আয়োজনের নির্দেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে মার্কিন ইতিহাসে কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রতিনিধি পরিষদে বুধবার এই অভিশংসন বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা।
স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আইনপ্রণেতা জ্যামি রাসকিনের নেতৃত্বে ৯ আইনপ্রণেতাকে নিয়ে অভিশংসন কমিটি গঠন করেছেন। এসব আইন প্রণেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসনের জন্য যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। ক্ষমতার বাকি মেয়াদে ট্রাম্পের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকেই কংগ্রেসে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছে। অভিশংসনের পরিবর্তে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এক ধরনের হালকা ব্যবস্থা। পেনসিলভানিয়া থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ব্রায়ান ফিটজপ্যাট্রিক এ প্রস্তাব তোলেন। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন শপথ নেবেন। ট্রাম্প ২০ জানুয়ারি দুপুরের পর থেকে আর প্রেসিডেন্ট পদেও নেই। ক্ষমতায় নেই—এমন একজন প্রেসিডেন্টের অভিশংসন নিয়ে আইনপ্রণেতাদের কংগ্রেসে বিতর্ক করার কোনো নজির যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নেই।
গত ৬ জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসের বাইরে সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় নভেম্বরের নির্বাচনে নিজেকে বিজয়ী দাবি করে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগ আনা হচ্ছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তখন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিজয়কে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এ সময় সমর্থকদের ক্যাপিটল ভবনের দিকে পদযাত্রা করতে নির্দেশ দেন ট্রাম্প। তাদের প্রতি তিনি ‘লড়াই’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। দাঙ্গাকারীরা ক্যাপিটল ভবনে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, পুলিশের সঙ্গে লড়াই ও আইনপ্রণেতাদের আতঙ্কিত করে তোলেন। এ সময় হাউসের অধিবেশন স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন অধিবেশনের সভাপতি মাইক পেন্স।
খুলনা গেজেট/এনএম