আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শুরু হবে। তবে ভবন সংস্কারের পর আগের কোর্ট রুমে বিচার শুরু হবে ১ নভেম্বর থেকে। আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম এ তথ্য জানান।
আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে হত্যা-গণহত্যার ঘটনার বিচার করতে আমরা বদ্ধপরিকর। গত জুলাই- আগস্টে অসংখ্য পরিবারে যে হাহাকারের করুণ কাহিনি রচিত হয়েছে, ছাত্র-জনতা যে অসীম আত্মত্যাগ করেছে, তার প্রতিদান দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবশ্যই এই বিচার এখানে হবে। এটা খুব দ্রুত শুরু হবে। এই ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিম যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে, চুলচেরা বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নেবে। আমরা এটুকু বলতে পারি, এখানে সুবিচার হবে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংস্কারকাজ দ্রুত গতিতে চলছে। আশা করছি, ১ নভেম্বর থেকে মূল ভবনে বিচারকাজ পরিচালনা করা যাবে।
এর আগে ট্রাইব্যুনালের নবনিযুক্ত বিচারপতিদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, আজ বুধবার ট্রাইব্যুনালের এজলাস কক্ষে বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পরদিন বৃহস্পতিবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ এজলাসে বসবেন। সেদিন থেকে বিচারকাজ শুরু হবে। শুরুর দিন প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় কয়েকটি আবেদন করা হবে বলেও জানান চিফ প্রসিকিউটর।
এর আগে নিয়োগের পর প্রথম কর্মদিবসে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদার। এ ছাড়া ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এদিন ট্রাইব্যুনালে আসেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার ও অন্য কর্মকর্তারা তাদের অভ্যর্থনা জানান।
গত সোমবার রাতে হাইকোর্টের বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করে প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীকে ওই ট্রাইব্যুনালের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। এরই অংশ হিসেবে নতুন প্রসিকিউশন টিম ও তদন্ত সংস্থা গঠিত হয়েছে। বিচারের জন্য আইন সংশোধন ও ভবন মেরামতের কাজও চলমান। গণঅভ্যুত্থানের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত গুম, হত্যা, গণহত্যাসহ ৬০টির বেশি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জমা পড়েছে।
স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনালের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। পরে ২০১২ সালের ২২ মার্চ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। তবে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুটি ট্রাইব্যুনালকে একীভূত করা হয়। ফলে একটি ট্রাইব্যুনালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকার্য চলমান ছিল।
খুলনা গেজেট/এইচ