কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়ন সীমান্তে থেমে থেমে সারা রাত গোলাগুলির শব্দ ভেসে এসেছে এপারে। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডুর দুপাশের (উত্তর ও দক্ষিণ) কয়েকটি গ্রামে শনিবার সন্ধ্যা থেকে গতকাল রোববার ভোর পাঁচটা পর্যন্ত সারা রাত থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বিস্ফোরণের বিকট শব্দে নাফ নদের এপারে কক্সবাজারের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, টেকনাফ পৌর শহর, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নে কম্পন অনুভূত হয়। আতঙ্কে রাত কেটেছে এখানকার মানুষের।
স্থানীয়রা জানান, টেকনাফের হ্নীলা সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বলিবাজার ও নাগাকুরা পাড়া। এপার থেকে দেখা যাচ্ছে জনবসতিতে আগুন লাগার কালো ধোঁয়া। কয়েকদিনের অব্যাহত সংঘাতের প্রভাব পড়ছে এপারের হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্তে। এতে সীমান্ত লাগোয়া চিংড়িঘের ও ক্ষেত-খামারে কাজে যেতে ভয় পাচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, ‘শনিবার সন্ধ্যার পর হ্নীলা ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ কিছুটা কম শোনা গেছে। কিন্তু মধ্যরাতের পর থেকে গোলাগুলির শব্দের পাশাপাশি একের পর এক ভেসে আসতে থাকে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ। রোববার ভোরের পর তা আরও বেড়ে যায়। সকাল ৮টা পর্যন্ত অন্তত ৪০-৫০টি বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় বসবাসকারীরা আতঙ্কে রয়েছেন।’
হোয়াইক্যং ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমেদ আনোয়ারী বলেন, ‘মর্টার শেলের বিকট শব্দে এলাকায় কম্পন অনুভূত হচ্ছে। রাতের বেলায় ঘনঘন কম্পনে শিশুদের ঘুম ভেঙে যাচ্ছে, অনেকে ভয়ে কান্নাকাটি করছে।’ তিনি বলেন, ‘হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিপরীতে নাফ নদের বুকে জেগে ওঠা তোতারদিয়া দুই সপ্তাহ আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। এখন মিয়ানমারের সরকারি বাহিনী সেটি পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’
টেকনাফ পৌরসভার নাফ নদের কাছাকাছি বসবাসকারী আবুল ফয়েজ বলেন, ‘রাতে থেমে থেমে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের বশিপাড়া (বকশিপাড়া) থেকে গোলাগুলির শব্দ ভেসে আসছে। অনেক সময় ভারী মর্টার শেল নিক্ষেপের শব্দে মনে হয় ভূমিকম্প হচ্ছে।’
এদিকে শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া না গেলেও এখনো দ্বীপের জেটিতে মানুষ চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার দোকানদার আবদুল শুক্কুর। তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে এই সীমান্তে কোনো গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে নাফ নদে কোস্টগার্ড এবং সীমান্তে বিজিবির টহল অব্যাহত। কিন্তু জেটি বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসায় ব্যাপক লোকসান হচ্ছে।
কোস্টগার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, ‘ওপারের চলমান যুদ্ধের পরিস্থিতির মাঝে নাফ নদ দিয়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশের সম্ভাবনা থেকে আমরা (কোস্টগার্ড) টহল জোরদার রেখেছি। নতুন করে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এরই মধ্যে আমরা দুই শতাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে প্রতিহত করেছি।’
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার রোধসহ যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সদস্যরা সব সময় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে এবং সীমান্ত নিরাপদে রাখতে বিজিবি রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’