কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলায় ক্ষেত পাহারায় থাকা পাঁচ কৃষককে আপহরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ভোরে পাহাড় থেকে সশস্ত্র অপহরণকারীদের দল নেমে এসে উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখারী এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাঁদের মুক্তিপণ বাবদ ৩৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বিষয়টি জানান।
রাশেদ মাহমুদ আলীর কাছ থেকে জানা যায়, টেকনাফের গহিন পাহাড়ে থাকা সশস্ত্র রোহিঙ্গা দুর্বৃত্তদল এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। অপহরণকারীরা অপহৃতদের পরিবারের কাছে ইতিমধ্যে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছে। তিনি বলেন, ‘অপহরণের খবরটি শুনে এলাকায় এসেছি। অপহৃতদের উদ্ধারে আমরা সবাই মিলে কাজ করছি।
অপহৃতরা হলেন হ্নীলা পানখালী এলাকার ফকির মোহাম্মদের ছেলে মো. রফিক (২২), শাহাজানের ছেলে জিহান (১৩), ছৈয়দ উল্লাহর ছেলে শাওন (১৫), আব্দুর রহিমের ছেলে মো. নুর (১৮) ও নুরুল আমিনের ছেলে আব্দুর রহমান (১৫)।
এদিকে মুক্তিপণ চেয়ে অপহৃত রফিকের বড় ভাই মো. শফিকের কাছে মুঠোফোনে ৩০ লাখ টাকা দাবি করেছে অপহরণকারীরা। এ বিষয়ে শফিক বলেন, ‘তিনি প্রতিদিনের ন্যায় জুম চাষে পাহাড়ে যান। কিন্তু আজকে সাহরি খেতে না আসায় তাকে খুঁজতে বের হই। পরে খবর পাই তাদের পাঁচজনকে ধরে নিয়ে গেছে। বিষয়টি আমি জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেছি।’
এ ছাড়া অপহৃত মো. নুরের মা খোরশিদা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলেকে অস্ত্রধারীরা ধরে নিয়ে গেছে। তবে কে বা কারা নিয়ে গেছে এখনো জানা যায়নি। কিন্তু একটি নম্বর থেকে কল করে ছেলের মুক্তিপণ চেয়ে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেছে। আমরা খুব গরীব মানুষ। এত টাকা কিভাবে জোগাড় করব? আমি ছেলে উদ্ধারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করছি।’
এ বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওসমান গনি জানান, ‘অপহরণের বিষয়টি আমাকে কেউ এখনো অবহিত করেনি। এর পরও আমি খোঁজ-খবর নিচ্ছি।’
সর্বশেষ গত ১০ মার্চ হোয়াইক্যং ইউনিয়নের ২২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকা থেকে সাতজনকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। এক দিন পর তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তারা ফিরে আসে। এর এক দিন আগে গত ৯ মার্চ হ্নীলার পূর্ব পানখালী এলাকা থেকে মাদরাসা পড়ুয়া ছাত্র ছোয়াদ বিন আব্দুলাহকে (৬) অপহরণ করে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। ১২ দিন অতিবাহিত হলেও এখনো তাকে উদ্ধার করা যায়নি।
এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এক বছরে সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের পাহাড়কেন্দ্রিক ১০৩টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার মধ্যে ৫২ জন স্থানীয় এবং ৫১ জন রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে যারা ফিরে এসেছে, তাদের অধিকাংশই মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছে।
খুলনা গেজেট/এইচ