খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১১ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  খুলনায় যুবদল নেতাকে গুলি করে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা
  রাজধানীর সূত্রাপুরে গ্যাস লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, স্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তান দগ্ধ

বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোমর পানি, ভেজা কাপড়ে পরীক্ষা!

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জলাবদ্ধতায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। শহর ও আশপাশের গ্রামের শতাধিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা প্রাঙ্গণ হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে তলিয়ে আছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম, বিশেষ করে চলমান এইচএসসি ও অর্ধ-বার্ষিক পরীক্ষা। সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণ যেন এক জলাশয়। কলেজে প্রবেশ করতেই কাদামাটি ও পঁচা পানির গন্ধে নাক চেপে ধরতে হয়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন ভেজা জামা-কাপড় পরে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। কলেজে ঢোকার সময় মনে হয় নদী পার হচ্ছি। জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে শহরতলির উত্তর কাটিয়া, ইটাগাছা, কুখরালি, ব্রহ্মরাজপুর, ঝাউডাঙ্গা, ফিংড়ি, আগরদাঁড়ি, বাঁকাল, তালতলা এলাকার প্রতিষ্ঠানগুলো।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের এক শিক্ষক বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে এমন হয়, কিন্তু বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের কোনো স্থায়ী সমাধান নেই। কলেজের ভেতরেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। যে কারণে বৃষ্টি বেশি হলে প্রথমে কলেজের মাঠ ও পরে কলেজ প্রাঙ্গণে পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ফলে চলতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কলেজে ঢুকতে ও বের হতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

পাটকেলঘাটা আমিরুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ স্কুল, বদ্দিপুর প্রাইমারি স্কুলসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক শিক্ষার্থী ভেলা, বাঁশ বা জুতা হাতে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। স্কুল মাঠগুলোতেও জমেছে পঁচা পানি। এরই মধ্যে বিদ্যায়লয় গুলোতে চলছে অর্ধ-বার্ষিকী পরীক্ষা।

কালীগঞ্জের মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে বিদ্যালয়ের আঙিনায় হাঁটাচলা করাই দায়। শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে পরীক্ষা দিচ্ছে।

অভিভাবকরাও হতাশ। তাদের প্রশ্ন, এই দুর্যোগে সন্তানদের স্কুলে পাঠাবো কিভাবে? বৃষ্টিতে ভিজে শিশুরা ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে।

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে পানি জমে যায়। শিক্ষার্থীরা কাদা-পানি পেরিয়ে ক্লাসে যাচ্ছে, এটাই কি শিক্ষার পরিবেশ? দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পাঠ ও মনোবলে পিছিয়ে পড়বে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শোয়াইব আহমাদ বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ঘের মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, শুধু উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য স্থানীয়দের অংশগ্রহণে বাঁধ নির্মাণসহ সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন। জেলার বিভিন্ন খাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাই খাল খননের পাশাপাশি দখলমুক্ত করা প্রয়োজন। খুব শীঘ্রই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

তথ্য মতে, সাতক্ষীরা জেলার সাতটি উপজেলায় দুই হাজারেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ১৩শ’র বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫শ’র বেশি মাধ্যমিক ও ৬০টির বেশি কলেজ রয়েছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!