খুলনার ডুমুরিয়ায় ৬ জুলাই থেকে শুরু হওয়া টানা ৪দিনের বৃষ্টিতে কুমড়াসহ বিভিন্ন ধরণের শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে পানি জমে কাঁঠালতলা বাজারস্থ গোবিন্দকাটি বিলের প্রায় ১০ একর জমির ফলন্ত মিষ্টি কুমড়া সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। সবমিলে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলায় ১০ কোটি টাকার বেশি ফসলী জমির ক্ষতি হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলায় আটলিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দকাটি, পাটনপাড়া ও মঠবাড়িয়া এলাকা ফসল উৎপাদনের জন্য একটি উর্বর ভূমি। ভালো ফলনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে এই অঞ্চলের মাটিতে। যার কারণে বছরে কয়েক কোটি টাকার বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়ে থাকে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা না থাকার কারণে তিন বিলের কৃষকের স্বপ্ন বিফলে যেতে বসেছে। গত ৬ জুলাই বিকাল থেকে ১০ জুলাই সকাল পর্যন্ত বিরামহীন বৃষ্টি হয় ডুমুরিয়ায়। যার ফলে গোবিন্দকাটি বিলের ১০ একরের বেশি জমির ফলন্ত মিষ্টি কুমড়া ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষেতের কুমড়া গাছ পচে গন্ধ বের হচ্ছে।
চাকুন্দিয়া গ্রামের কৃষক স্বপন মল্লিক বলেন, প্রচুর বর্ষার কারণে কুমড়া গাছের শিকড় নষ্ট হয়ে গেছে। আর বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা। ফল ধরণের মুখে ক্ষেত নষ্ট হয়ে বড় ধরণের ক্ষতি হয়েছে তার। ৩২ হাজার টাকা হারিতে ৫০ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেন তিনি। বছরে তিন ফসল উঠবে। বছরের শুরুতেই ফসল নষ্ট হয়ে প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় কৃষকের স্বপ্ন জমিতেই রয়ে যাচ্ছে।
কৃষি অফিস জানিয়েছে, অতিবৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্ট কারণে শাক-সবজিসহ ২০৩ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল নষ্ট হয়েছে। আউশ ধান, আমন বীজ তলা, মরিচ, আদা, হলুদ, পেঁপে, অফসিজন তরমুজ, পান, গ্রীষ্মকালীন টমেটো ও শিম ক্ষেতের এ ক্ষতি হয়েছে। সবমিলে ১০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। উৎপাদিত ফসলের প্রায় ৯% ফসল ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, অতিবৃষ্টির ফলে যেখানে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে, সেখানে সবজির ক্ষেত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। জলাবদ্ধতা স্থায়ীভাবে নিরসনে উপজেলা প্রশাসনসহ কৃষি বিভাগ নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া সামনে আরো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। যেকারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসির কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। ফসলি জমি রক্ষা করতে হলে বিলের মধ্যের বিভিন্ন খাল খনন এবং স্লুইজ গেটগুলো সচল করে পানি নিষ্কাশনের সু-ব্যবস্থা করার উদ্যোগী হতে হবে।
আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন বলেন, গোবিন্দকাটি এবং পাটনপাড়া বিলে কৃষি ফসল উৎপাদনের একটি উর্বর ভূমি। গত বছর নদী ভাঙনের কারণে ফসল তলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার শুধু শিম নষ্ট হয়েছিলো। এবার অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানি জমে মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করে পানি নিষ্কাশনের লক্ষ্য নিয়ে ভদ্রা নদীর রক্ষা বাঁধে একটি মিনি স্লুইজ গেট নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এটা চালু করতে পারলে আশাকরি এবিলের জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।
খুলনা গেজেট/এএজে