খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুনে নিহত ১
  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিষয়ে নিশ্চিত নয় ট্রাইব্যুনাল

টানা বর্ষণ ও জোয়ারে ভাসছে বাগেরহাটের মৎস্য ঘের

শহিদুল ইসলাম, বাগেরহাট

চার দিনের টানা বৃষ্টির সাথে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শুধু নিম্নাঞ্চল নয় বাগেরহাট জেলা শহরের প্রধান বাজার, মোরেলগঞ্জ বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ও সড়ক ডুবে গেছে পানিতে। ভেসে গেছে কয়েক হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ। নষ্ট হয়েছে চাষীদের সবজি ক্ষেত। দিশেহারা হয়ে পড়েছেন মৎস্য ও সবজি চাষীরা। অনেকের বাড়ি ঘরেও পানি উঠে গেছে। রান্নাও বন্ধ রয়েছে কারও কারও। তবে সবজি ও মৎস্য খাতে সঠিক কি পরিমান ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে তা জানাতে পারেননি মৎস্য ও কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাগেরহাট জেলার রামপাল, কচুয়া, চিতলমারী, মোল্লাহাট, ফকিরহাট ও মোরেলগঞ্জ এলাকায় বিপুল পরিমান মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। মাঠের ঘেরগুলো পানিতে প্লাবিত হয়ে একাকার হয়েছে। মাঠ থেকে পানির সাথে মাছও যাচ্ছে নদী ও খালে। এতে চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া ইউনিয়নের উত্তর ফুলহাতা গ্রামের আল আমিন, আব্দুল হালিম ফকির, রাকিবসহ মাছ চাষী বলেন, গত তিনদিন ধরেই অবিরাম বৃষ্টির সাথে জোয়ারের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের ঘেরগুলো তলিয়ে গেছে। আমাদের এই গ্রামের শতাধিক মানুষের ঘের তলিয়ে গেছে। আমাদের সবকিছু শেষ হয়ে গেছে।

ঘষিয়াখালী গ্রামের কায়কোবাদ মৃধা বলেন, ২২ বিঘা জমিতে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয় করে মাছ চাষ করেছিলাম। পানিতে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল। কিভাবে দেনা শোধ করব জানিনা।

বহরবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং (উত্তর ফুলহাতা) ওয়ার্ডের সদস্য মোঃ ফরিদ ফকির বলেন, টানা বৃষ্টির সাথে কেওড়া ও পানগুছি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহরবুনিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৬ থেকে ৭শ ঘের ডুবে গেছে। এতে আমাদের চাষীদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ওয়ার্ডের অনেকের বাড়ি ঘরও তলিয়ে গেছে। রান্নাও বন্ধ রয়েছে বেশকিছু মানুষের। মূলত নদীবেষ্টিত এই ইউনিয়নে কোন বেড়িবাঁধ না থাকায় যেকোন দূর্যোগে আমাদের এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়।

কচুয়া উপজেলার নরেন্দ্রপুর গ্রামের ইউনুস শেখ বলেন, পোনা ছাড়ার কিছুদিন পরেই আম্পানের আঘাতে পানিতে তলিয়ে যায় আমাদের ঘের। ভেসে যায় মাছ। আম্পানের পরে আবার নতুন করে শুরু করেছিলাম সব কিছু। যখন মাছ বিক্রি করব তখনই টানা বৃষ্টি ও জোয়ারের পানি আবারও ভেসে গেল আমাদের স্বপ্ন। কি করব জানি না।
চিতলমারী এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, পানিতে মাছ তো গেছেই। বিভিন্ন সবজি গাছও মরে মরে প্রায়। টানা বৃষ্টিতে গাছের গোরায় পানি জমে শিকর পচে গেছে প্রায়। এখন রোদ উঠলেই মারা যাবে গাছগুলো।
এদিকে, বৈরী আবহাওয়ার কারনে নদী ও সাগরে জাল ফেলতে না পেরে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী সুন্দরবনে অবস্থান নিয়েছেন কয়েক হাজার জেলে। কেউ কেউ আবার শরণখোলায় নিজ উপজেলায়ও ফিরে এসেছে।

পুর্ব সুন্দরবন বিভাগে শরনখোলা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, সমুদ্রে ঝড় হলে জেলেরা সাধারনত বনের খালে আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক জেলে আবার লোকালয়েও আশ্রয় নিয়েছে। কোন জেলে যদি সমুদ্রে সমস্যায় থাকে তাহলে তাদেরকে আশ্রয় ও উদ্ধারের জন্য বন বিভাগ চেষ্টা করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক রঘু নাথ কর বলেন, সবজি মৌসুমের এখন প্রায় শেষ সময়। বৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। তবে এভাবে যদি আরও দুই একদিন বৃষ্টি হতে থাকে তাহলে সবজির বেশ ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা খবর পেয়েছি অবিরাম বৃষ্টি ও বেড়িবাঁধ উপচে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে বাগেরহাটের কোথাও কোথাও চিংড়ি ঘের ডুবে গেছে। আমরা জেলা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের জন্য। মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য পেলে জানানো যাবে কি পরিমান ক্ষতি হয়েছে।

খুলনা গেজেট/এআইএন




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!