এপ্রিল ও মে মাসে খুলনায় টানা দাবদাহ চলছে। মে মাসের প্রথম দিকে এক ঝলক বৃষ্টিতে মাটিতে জোঁ আসেনি। ফলে খুলনার ৪ হাজার ৯শ’ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। শীত মৌসুমে ফুলকপি, সীম ও টমেটোর ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষক ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়ে। টানা দাবদাহে গ্রীষ্মকালীন সবজি ঢেঁড়শ, পটল, কাঁকরোল ও বেগুনে এখনও ফুল আসেনি। এ সপ্তাহে বৃষ্টি না হলে কৃষি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষক কাঙ্খিত উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে।
২০২৩-২৪ শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষক ফুলকপি কেজি প্রতি ৬০-৮০ টাকা, শীম মৌসুমের শুরুতে ১০০ টাকা শেষদিকে ৪০ টাকা ও টমেটো প্রতি কেজি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গড়ে ৪০ টাকা দাম পায়। ফলে করোনার ধাক্কা সামাল দিতে পারে। সদ্য সমাপ্ত শীত মৌসুমে ডিসেম্বরে ফুলকপি কেজি প্রতি ১০ টাকা, টমেটো ১০ টাকা ও সীম ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। দাম না পেয়ে ডুমুরিয়ার চুকনগর ও বরাতিয়া চাষীরা টমেটো বাজারজাত করতে রাজি হয়নি। দৈনিক কৃষি শ্রমিকের মজুরী ছিল ৬০০ টাকা। দেড় মণ টমেটো বিক্রি করেও এক দিনের শ্রমিকের মজুরী না হওয়ায় মহাজন চাষীরা এ পণ্য বাজারজাত করতে রাজি হয়নি।
রোববার খুলনায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ২৮ মার্চ– গতকাল পর্যন্ত ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৪১ ডিগ্রি তাপমাত্রা ওঠানামা করে। ফলে এ অঞ্চলে মাটি আর সতেজ থাকছে না। বীজ অঙ্কুরোদগম বিলম্ব হচ্ছে। অধিক গরমে ঢেঁড়শ ও মিষ্টি কুমড়ার বীজ মাদায় নষ্ট হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলার ৪ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির আবাদ ইতিমধ্যেই হয়েছে। মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৩৩০ হেক্টর। বৃষ্টি না হওয়ায় মিষ্টি কুমড়া, লাউ, পটল, ঝিঁঙে ও কাঁকরোলের মাদা করা সম্ভব হচ্ছে না। মাটিতে অল্প জোঁ থাকায় উচ্ছে, করোল্লা, ডাটা শাক, লাল শাক, পুঁইশাক, লাউ শাক, ঢেঁড়েশ, শশা, মান কচু, ধুন্দুল চাষ হয়েছে। এ ছাড়া আউশ তিল, হলুদ, কচুরমুখি, আদা ও ওল চাষ করা হয়েছে।
৬ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমান উল্লেখযোগ্য ছিল না। ২৯ এপ্রিল ২৩ মিলিমিটার এবং ২ মে ১১দশমিক ৮১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা গ্রীষ্মকালীন শাকসবজির জন্য যথেষ্ঠ নয়। ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও বটিয়াঘাটা থেকে কাঙ্খিত সবজি না পাওয়ায় নগরীর ট্রাক টার্মিনালের পাইকারি সবজির বাজারে মন্দাভাব চলছে। ডুমুরিয়া সদর ও আঠারো মাইলে পাইকারি বাজার কিছুটা স্বাভাবিক। এ মাসে কঙ্খিথত বৃষ্টি না হলে সবজি উৎপাদনে কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে না। মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতে সেচ যন্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। দিনের রাতে লোডশেডিং এর কারণে মিষ্টি কুমড়া ও ঢেঁড়শ ক্ষেতে সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ডুমুরিয়ার বরাতিয়া এলাকার কৃষক মো. হানিফ মোড়ল বলেন, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার এখনো মিষ্টি কুমড়া ও ঢেঁড়শের মাদা তৈরি করতে পারিনি। দুর থেকে পানি নিয়ে দুবার মাদা তৈরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। এখন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মহাদেব চন্দ্রের ভাষ্য, বৃষ্টি না হওয়ায় আউশের বীজতলা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য সবজির মাদা ও তৈরি করা যাচ্ছে না। কৃষকরা ক্ষেত্রবিশেষ সকালে দুর থেকে পানি এনে মাদা সতেজ করার চেষ্টা করছে। বৃষ্টি না হলে কাঙ্খিত ফলন হবে না।
খুলনা গেজেট/এএজে