টানা তিন মাস প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকার পর আজ ১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার থেকে বনজীবী ও পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত হচ্ছে সুন্দরবন। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের উপকূলীয় এলাকার সুন্দরবন নির্ভর মানুষের মধ্যে।
সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণায় সাতক্ষীরা উপকূলে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বনজীবী ও পর্যটন নির্ভর মানুষেরা। নৌকা-ট্রলার প্রস্তুতের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। অভাব অনটনে পড়ে থাকা বনজীবীরা কষ্ট ভুলে আবারও নতুন উদ্যমে ফিরতে চান সুন্দরবনে। তারা এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন মাছ ও কাঁকড়া ধরতে বনে যাওয়ার জন্য। তিন মাস পরে পর্যটকদের জন্যে সুন্দরবনের ভিতরে কলাগাছিয় সাজানো হয়েছে নানান রুপে। আজ থেকেই বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবেন সাধারণ মানুষ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে মাছ ও কাঁকড়া আহরণের জন্য বোর্ড লাইসেন্স সার্টিফিকেট (বিএলসি) রয়েছে ২ হাজার ৯০০টি। এরমধ্যে নবায়ন হয়েছে ২৭৯৬টি। বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়েছে ১০৪টি। মধু মোম সংগ্রহের বিএলসি ৩০০, গোলপাতা ২৮ ও লবণপানির রয়েছে ১০টি বিএলসি। মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশের অনুমতি বন্ধ রেখেছিল বন মন্ত্রণালয়।
মৎস্য অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যে অনুযায়ী শ্যামনগর উপজেলায় নিবন্ধিত ২৩ হাজার জেলে-বাওয়ালী রয়েছেন। এদের মধ্যে সমুদ্রে মৎস্য আহরণকারী জেলে রয়েছে ৭৯৫জন।
শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালিনী এলাকার কাঁকড়া আহরণকারী জেলে আনিছুর রহমান বলেন, আমি সারাজীবন সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ধরে সংসার চালিয়ে আসছি। তিন মাস পাস বন্ধ থাকায় আমার পরিবারের ওপরে আর্থিক প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছি। আশা করেছিলাম সরকারি সহায়তা পেলে কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। তবে সরকারি কোন সহায়তা না পাওয়া এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে।
গাবুরা ইউনিয়নের জেলে আহাদ আলী বলেন, ‘তিন মাস বনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। এই সময়ে আমাদের অন্য কোনো কাজও ছিল না। সরকার থেকে কোনো সহায়তাও দেয়া হয়নি। দীর্ঘদিন পরে সবাই বনে যেতে পারবে। তাই নৌকা ও জাল মেরামত করতে কাজ করছি।
নীলডুমুর ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম বলেন, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় জেলে বাওয়ালী পর্যটক কেউই সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারেনি। তাই জেলে বাওয়ালীদের সাথে ট্রলার মালিক ও শ্রমিকদেরও দুর্দিনে কেটেছে। কারণ এখানকার ট্রলারগুলো শুধুই পর্যটকদের জন্য।
তিনি আরো বলেন, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের জন্য অন্তত ১০০টি পর্যটক ট্রলার রয়েছ। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে ৫০টা ট্রলার মালিকরা ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা লোন নিয়ে সেগুলো মেরামত করছে। এখন সবার প্রত্যাশা-ঘুড়ে দাঁড়ানোর।
বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা নুর আলম বলেন, বর্ষা মৌসুমে সুন্দরবনের অধিকাংশ প্রাণীর প্রজনন হয়। এই সময়ে যাতে বন্যপ্রাণীদের কোনো ধরণের সমস্যা না হয়, সে জন্য সবাইকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, পর্যটনের আজ থেকে সুন্দরবন উন্মুক্ত করা হচ্ছে। একই সাথে বনজীবীরাও বৈধ পাস নিয়ে সুন্দরবনে যেতে পারেবন। পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য বন বিভাগের পক্ষ থেকে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।