সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণে যাওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যে শিক্ষার্থীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে, তাদের উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা সংবাদ সম্মেলন করে সন্তানদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘বানোয়াট’ বলে দাবি করেছেন।
ওই শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় কারাগারে পাঠানোর পরদিন মঙ্গলবার (০১ আগস্ট) বুয়েট শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।
টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে রোববার আটক করে সোমবার তাদের পুলিশের করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে সুনামগঞ্জ কারাগারে পাঠান হয়।
মোট ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের তথ্য জানিয়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর থানার ওসি ইফতেখার হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাদের ৩১ জন বুয়েটের শিক্ষার্থী। তবে সংবাদ সম্মেলনে ২৪ শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তারা অবশ্য আটক ৩৪ শিক্ষার্থীরই মুক্তি দাবি করেন।
পুলিশের দাবি, গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরে যুক্ত। তারা হাওরে বেড়ানোর উসিলায় এসে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে বৈঠকে বসেছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বুয়েটের যন্ত্র কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আম্মার মুয়াজের বড় ভাই আলী আহসান জুনায়েদ অভিভাবকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে এমন অকল্পনীয় অভিযোগ শুনে আমরা যারপরনাই আশ্চর্যান্বিত হয়েছি। আমরা মনে করি, এরকম হাস্যকর ও বানোয়াট অভিযোগ সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও দুরভিসন্ধিমূলক। আমাদের সন্তানদের অন্যায়ভাবে আটক করা, সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা দায়ের আমাদের সন্তানদের শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের সাথে আমাদের সন্তানেরা জড়িত নয়। রাজনীতিসহ এজাতীয় কোনো কাজে তাদের সংশ্লিষ্টতা ছিল না কখনই।
“উপরন্তু, বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় আমরা সর্বদাই তাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করে গেছি এবং তারাও রাজনীতিমুক্ত হিসেবেই ছিল। তারা কোনো ধরনের রাজনীতির সাথে জড়িত, এ ধরনের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
সোমবার ওই শিক্ষার্থীদের সুনামগঞ্জের আদালতে তোলা হলে তাদের পক্ষে দাঁড়াতে জামায়াত এবং ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা, যারা এখন আইনজীবী, তারা উপস্থিত ছিলেন।
সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আইনজীবী আবুল বাশার বলেছিলেন, “গ্রেপ্তারকৃতরা ছাত্রশিবিরের কোন পর্যায়ের নেতা-কর্মী, তা এখনও আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি। তাদের জন্য আইনজীবী নিয়োগের ব্যাপারে পরিবার থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, “ভিক্টিম শিক্ষার্থীদের পরিবার হিসেবে আমরা মানসিকভাবে বেদনাদায়ক সময় পার করছি ও তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় আছি। দ্রুত তাদের জামিন প্রদান ও মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বিচারবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে দাবি জানাচ্ছি।”
খুলনা গেজেট/কেডি