বাগেরহাটের চিতলমারীতে টমেটোর দরপতনে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। হঠাৎ দরপতনে ক্ষেতের পাকা টমেটো নিয়ে চাষিরা এখন উদ্বিগ্ন। কারণ ক্ষেত থেকে তুলে টমেটো আড়ৎ (মোকাম) পর্যন্ত পৌঁছানোর কামলার মজুরি ও পরিবহন খরচ না উঠছেনা। চাষিরা বাজার নিয়ন্ত্রণে মধ্যস্বত্বভোগীদের দায়ী করলেও পাইকাররা জানিয়েছেন ভিন্ন কথা। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২ টাকা কেজির টমেটো বুধবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে ৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, বাজার দর এমন চলতে থাকলে এ বছর টমেটো চাষিরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ন্যুঁয়ে পড়বে তাঁদের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড।
চিতলমারী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় কমপক্ষে ১৬ হাজার সবজি চাষি পরিবার রয়েছে। এখানের চাষিরা ১ হাজার ৫৭৬ একর জমিতে শসা, ৪৬৫ একর জমিতে করলা, ১৩১ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ১০৪ একর জমিতে চাল কুমড়া ও ৫৯৫ একর জমিতে অন্যান্য সবজিসহ মোট ২ হাজার ৮৭১ একর জমিতে সবজি চাষ করে থাকেন। এবার কৃষকরা টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। আর অধিকাংশ চাষই হয়েছে মাছের ঘেরের পাড়ে। এ বছর উপজেলায় ২ হাজার ৭২ একর জমিতে হাইটম, বিউটিফুল-২, বিপুল প্লাস, মেজর, বাহুবলী ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে। তাঁরা এ বছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। বিরূপ আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে টমেটোর বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। আর এই বাম্পার ফলনকে ঘিরে এ উপজেলার ১৬ হাজার চাষি ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রথম দিকে প্রতিমণ টমেটো ৩ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি টমেটো ১০ থেকে ১২ টাকা দরে বিক্রি হলেও বুধবার দুপুরে তা প্রতি কেজি ৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
উপজেলার দড়িউমাজুড়ি (গিরিঙ্গির) মোড়ে আড়তে বিক্রি করতে আসা টমেটো চাষি সোহেব সুলতান সানু, আবুলের মোড়ের গিরিশ হালদার, শংকর মন্ডল, মনিমোহন হীরা, বিবেক মজুমদার, নৃপেন পোদ্দারসহ অনেক চাষি বলেন, ‘এ অঞ্চলের টমেটো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটায়। প্রতিবছর এখানে কয়েক লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হয়। হঠাৎ টমোটের দরপতনে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা সুযোগ নিচ্ছেন।’
পাইকারী ক্রেতা লিপন মজুমদার, অনুজ রানা, অসীম বিশ্বাস ও আসাদ বিশ্বাস বলেন, ‘বুধবার প্রতি কেজি টমেটো ৩ টাকা দরে কিনেছি। দেশের যে সব অঞ্চলে চিতলমারীর টমেটোর চাহিদা ছিল, সেই সব এলাকায় এখন চাহিদা কম। তাছাড়া উৎপাদন অনেক বেশী। ফলে এই দরপতন। এছাড়া দাম কমের কারণে বাজারে পাইকারী ক্রেতাও কম।’
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সিফাত-আল-মারুফ জানান, এ উপজেলায় এখন টমেটো উৎপাদনের মাঝামাঝি সময়। বাজার দর এমন চলতে থাকলে চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোর থাকলে চাষিরা টমেটো সংরক্ষণ করে পরে বেশী দামে বিক্রি করতে পারত। যেহেতু সে ব্যবস্থা নেই। তাই চাটনী, জুস উৎপাদন কোম্পানি গুলো এগিয়ে আসলে চাষিরা ভাল দাম পেত এবং লাভবান হতো।
খুলনা গেজেট/এএজে