বাগেরহাটের চিতলমারীতে হঠাৎ টমেটোর বাজার দর পতন হয়েছে। দরপতনে খেতের পাঁকা টমেটো নিয়ে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। খেত থেকে তুলে টমেটো আড়ৎ (মোকাম) পর্যন্ত পোঁছানোর কামলার মজুরি ও পরিবহন খরচ না উঠায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
চাষিরা বাজার নিয়ন্ত্রণে ফড়িয়াদের দায়ী করলেও পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা। মাত্র দশদিনের ব্যবধানে ১৫ থেকে ২০ টাকার টমেটো সোববার (০৬ জানুয়ারী, ২০২৩ খ্রিঃ) দুপুরে প্রতিকেজি ৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে টমেটো চাষে লোকসান হবেন বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
চিতলমারী কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় কমপক্ষে ১৬ হাজার সবজি চাষি পরিবার রয়েছে। এখানের চাষিরা এক হাজার ৫৭৬ একর জমিতে শসা, ৪৬৫ একর জমিতে করল্লা, ১৩১ একর জমিতে মিষ্টি কুমড়া, ১০৪ একর জমিতে চাল কুমড়া ও ৫৯৫ একর জমিতে অন্যান্য সবজিসহ মোট ২ হাজার ৮৭১ একর জমিতে সবজি চাষ করে থাকেন। এবার শীতের সময় কৃষকরা টমেটোসহ বিভিন্ন প্রকার সবজির চাষ করেছেন। আর অধিকাংশ চাষই হয়েছে মাছের ঘেরের পাড়ে।
এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ৮৪০ একর জমিতে চক্র, পানপাতা, মিন্টু সুপার, লাভলী, হাইটম ও বিউটিসহ বিভিন্ন জাতের টমেটোর চাষ করা হয়েছে।
এছাড়াও তাঁরা এ বছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। বিরূপ আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে টমেটোর বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। আর এই বাম্পার ফলনকে ঘিরে এ উপজেলার ১৬ হাজার চাষি ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রথম দিকে প্রতিমন টমেটো দুই হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মাত্র দশদিন আগে প্রতি কেজি টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হলেও সোমবার দুপুরে তা প্রতি কেজি ৩ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
উপজেলার দড়িউমাজুড়ি (গিরিঙ্গির) মোড়ে আড়তে বিক্রি করতে আসা টমেটো চাষি রেজাউল দাড়িয়া, প্রকাশ মজুমদার, সুজিত সিংহ ও অনিমেশ মন্ডল বলেন, ‘এ অ লের টমেটো দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা মেটায়। প্রতিবছর এখানে কয়েক লাখ টন টমেটো উৎপাদিত হয়। হঠাৎ টমোটের দরপতনে আমরা চরম বিপাকে পড়েছি। সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় পাইকারী ক্রেতারা মিলে আমাদের ঠকাচ্ছেন।’
পাইকারী ক্রেতা লিপন মজুমদার বলেন, ‘সোমবার আমি প্রতি কেজি টমেটো ৩ টাকা দরে কিনেছি। দেশের যে সব অ লে চিতলমারীর টমেটোর চাহিদা ছিল, সেই সব এলাকায় এখন চাহিদা কম। ফলে এই দরপতন। এছাড়া দাম কমের কারণে বাজারে পাইকারী ক্রেতাও কম।’
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিফাত-আল-মারুফ জানান, সারাদেশে টমেটো পাকতে শুরু করেছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোর থাকলে চাষীরা টমেটো সংরক্ষণ করে পরে বেশী দামে বিক্রি করতে পারত। এছাড়া চাটনী, জুস উৎপাদন কোম্পানী গুলো এগিয়ে আসলেও চাষীরা ভাল দাম পেত।
খুলনা গেজেট/এমএম