আগামী অর্থবছরের বাজেটে ৪১ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ চায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ। চলতি অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয় ২৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা, সংশোধিত বাজেটে যা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা। এখন সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৯ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ চায় এই দুই বিভাগ। এর মধ্যে বিদ্যুৎ বিভাগ বরাদ্দ চায় ৩৮ হাজার ২০ কোটি টাকা এবং জ্বালানি বিভাগ চায় ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। জ্বালানির চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা ১১ গুণ বেশি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুৎ খাত ধারাবাহিকভাবে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা চাহিদার চেয়েও বেশি। কিন্তু জ্বালানি সংকটে চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ সংকট কাটাতে জ্বালানি খাতে বেশি বরাদ্দ রাখা উচিত। বিশেষ করে গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কাজে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ খাত
আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগ বরাদ্দ চায় ৩৮ হাজার ২০ কোটি টাকা । এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন খাতের (এডিবি) ৬১ প্রকল্পে বরাদ্দ চায় ৩৭ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। চলমান অর্থবছরের সংশোধিত এডিবি খাতে বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২৭ হাজার ৯০৪ কোটি টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয় ১৭ হাজার ১২৮ কোটি টাকা (৬১.৩৮%)। এডিবির জন্য সরকারি অর্থায়নের ৫১ প্রকল্পের জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ চেয়েছে ১১ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এ খাতে চলতি বছরের বরাদ্দ রয়েছে ৯ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। এই বিভাগের প্রকল্প সাহায্যের ৫ প্রকল্পে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ২২ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। চলমান বাজেটে এ জন্য রাখা হয়েছে ১৫ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের ৫ প্রকল্পের জন্য ২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৪ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে এক্সপোর্ট ক্রেডিট ঋণ ৭৭৮ কোটি টাকা। ২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে নিজস্ব অর্থায়নের বরাদ্দ রয়েছে ২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আগামী বাজাটে বিদ্যুৎ বিভাগ পরিচালন খাতে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
জ্বালানি খাত
আগামী অর্থবছরের বাজেটের জন্য ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে জ্বালানি বিভাগ। এর মধ্যে এডিবির ৪১ প্রকল্পে ৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এই খাতের জন্য রাখা হয় ৪ হাজার ২ কোটি টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা (৫৯.৯৭%)। জ্বালানি বিভাগ সরকারি অর্থায়নের ৬ প্রকল্পের জন্য ৫২১ কোটি টাকা চেয়েছে। চলমান বাজেটে এ খাতে রাখা হয়েছে ৬৪৮ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য প্রকল্প সাহায্যের প্রকল্পগুলোর জন্য জ্বালানি বিভাগ চেয়েছে ৩৬৪ কোটি টাকা। এই অর্থবছরে এ খাতে ১ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী বাজেটে নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পগুলোর জন্য জ্বালানি বিভাগ মোট বরাদ্দ চেয়েছে ২ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। চলমান অর্থবছরের বাজেটে জ্বালানি খাতের সংস্থাগুলোর নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পগুলার জন্য রয়েছে ২ হাজার ২১১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের জন্য জ্বালানি বিভাগ পরিচালন খাতে ৮ দশমিক ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, বিদ্যুৎ খাতকে সব সময় প্রাধান্য দিয়ে জ্বালানিকে পেছনে রাখা হয়েছে। তাই এখন থেকে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎকেন্দ্র থাকলেও সেগুলো বসিয়ে রাখতে হয়েছে। বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ খাতের জন্য খরচ করতে হবে; তবে মূল ফোকাস রাখা উচিত জ্বালানিতে। নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, উত্তোলন বাড়ানো ও কয়লা খনির উন্নয়নে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন।
খুলনা গেজেট/এইচ