আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাতক্ষীরা-৩ আসনে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। তবে সাতক্ষীরার চারটি সংসদীয় আসনের তিনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা থাকলেও সাতক্ষীরা-৩ আসনে সে সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। আর সে কারণেই আসনটিতে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের মনে।
সাতক্ষীরা জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, আশাশুনির ১১টি, দেবহাটার ৫টি ও কালিগঞ্জের ৪টি মিলে মোট ২০ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন। সাতক্ষীরা-৩ (আশাশুনি-দেবহাটা-কালিগঞ্জের আংশিক) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৮০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লক্ষ ১৮ হাজার ২৬৪ জন এবং মহিলা ভোটার রয়েছে ২ লক্ষ ১৩ হাজার ১৩৪ জন। এছাড়া এই আসনে হিজড়া ভোটার রয়েছে তিনজন। এখানে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৪টি। মোট ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯৩৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী ভোট কক্ষ ৮৫৮টি ও অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৭৭টি।
বিএনপি-জামায়াতের বর্জনের মুখে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী রয়েছেন ৬জন। শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য মাঠে থাকা নয়, রীতিমত নির্বাচনী প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন সবাই। এসকল প্রার্থীদের মধ্যে টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য অধ্যাপক ডাঃ আ ফম রুহুল হক এমপি আবারো নৌকার মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ, নলতায় ম্যাটস প্রতিষ্ঠাসহ জেলার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী এই কর্মবীরের সাথে মাঠে ছুটে পারা অনেকের জন্য কষ্টকর। জাতীয় সংসদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ডাঃ রুহুল হক। দেশের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নেও তার ভূমিকা অপরিসীম। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ডাঃ রুহুল হক আন্তজার্তিক ক্ষেত্রেও দেশের পক্ষে এবং সরকারের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। এছাড়া সাতক্ষীরার সামগ্রিক উন্নয়নে ডা: রুহুল হকের অবদান অপরিসীম। ফলে এসব কারণে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় অনেক আগে থেকেই নিজের অবস্থান অনেকটা শক্ত করতে পেরেছেন।
সাতক্ষীরা-৩ আসনের নির্বাচনে ডাঃ রুহুল হকের সাথে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির উদীয়মান নেতা জেলা জাতীয় পাটির অন্যতম সদস্য এড. স.ম আলিফ হোসেন, তৃণমূল বিএনপির পক্ষে সোনালী আঁশ প্রতীক নিয়ে মাঠে নেমেছেন জাসদের রুবেল হোসেন, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) পলিট ব্যুরোর সদস্য শেখ তরিকুল ইসলাম লড়ছেন চাকা প্রতীক নিয়ে, ন্যাশনাল পিপলস পাটি (এনপিপি) প্রার্থী মোঃ আব্দুল হামিদ আম প্রতিক এবং জাকের পার্টির মঞ্জুর হোসেন গোলাপ ফুল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে জাতীয় পাটির প্রার্থী এড. স.ম আলিফ হোসেন এর কিছুটা পরিচিতি থাকলেও বাকিরা সবাই এলাকার সাধারণ ভোটারদের কাছে অপরিচিত। এছাড়া এখানে একমাত্র ডাঃ রুহুল হক ছাড়া বাকিরা সবাই প্রার্থী হিসাবে একেবারে নতুন। যে কারণে এলাকায় তাদের পরিচিতিও অপক্ষোকৃত কম।
এদিকে বিগত ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১ লাখ ৪২ হাজার ৭০৯ ভোট পেয়ে ডাঃ রুহুল হক প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সব দলের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে বিএনপি-জামায়াত জোটের প্রার্থী জামায়াতের রিয়াছাত আলী পেয়েছিলেন ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮০২ ভোট। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডাঃ রুহুল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ডাঃ রুহুল হক ৩ লাখ ৩ হাজার ৬৪৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি-জামায়াত জোট মনোনীত বিএনপি প্রার্থী ডাঃ শহিদুল আলম পেয়েছিলেন ২৪ হাজার ৬৭১ ভোট। তবে এবারের নির্বাচনে ডাঃ রুহুল হকের সাথে কারোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে না বলে ধারণা সকলের। কেননা এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা অন্য পাঁচ প্রার্থীর সকলেই এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের কাছে তারা সম্পূর্ন নতুন মুখ। প্রার্থীদের কেউ দলীয় আদর্শ প্রচারের জন্য, কেউ পরিচিত হওয়ার জন্য এবং কেউ বিজয়ী হওয়ার আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তবে নির্বাচনে যথেষ্ট ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে সংশয়ে আছে প্রার্থীদের মনে।
প্রার্থীদের মধ্যে ডাঃ রুহুল হক ও এনপিপির প্রাথী আব্দুল হামিদ নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছেন। নিদিষ্ট সময়ে তাদের পক্ষে চলছে মাইকিং সহ অন্যান্য প্রচার প্রচারণা। এছাড়া বাকি প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা তেমন চোখে পড়ার মত নয়। ফলে ধরে নেয়া যায় এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডাঃ আফম রুহুল হকের বিজয় শুধু সময়ের ব্যাপার।
খুলনা গেজেট/ এএজে