জহির রায়হান- খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার। স্বল্প পরিসর জীবনে তিনি বেশ কিছু উপন্যাস ও গল্প রচনা করেছেন। চলচ্চিত্র প্রযোজনা এবং পরিচালনায়ও তাঁর ভূমিকা ছিল অসাধারণ। যুক্ত ছিলেন প্রগতিশীল রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে। আজ তাঁর ৮৫তম জন্মবার্ষিকী।
জহির রায়হানের প্রকৃত নাম মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। জন্ম ১৯৩৫ সালের ১৯শে আগস্ট ফেনীর মজুপুর গ্রামে। জহির রায়হান তাঁর সাহিত্যিক নাম। এ নামেই তিনি সুপরিচিত। তাঁর শৈশব কেটেছে কলকাতায়। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় আসেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে বাংলায় এম.এ করেন জহির। চলচ্চিত্রের সাথে তাঁর যোগ ছাত্রাবস্থায় সাহিত্য চর্চাও করতেন নিয়মিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে জহির রায়হান পাকিস্তানিদের গণহত্যা ও বুদ্ধিজীবী নিধনের এক অসাধারণ প্রামাণ্য দলিল ‘স্টপ জেনোসাইড’ তৈরি করেন। তদানীন্তন পাকিস্তানে প্রথম রঙিন ছবি ‘সঙ্গম’ জহির রায়হানের সৃষ্টি। প্রথম সিনেমাস্কোপ ছবি তৈরিতেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল।
জহির রায়হানের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রকর্ম : ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘বার্থ অব এ নেশন’, ‘বেহুলা’, ‘আনোয়ারা’ প্রভৃতি। তাঁর উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে: ‘বরফ গলা নদী’, ‘আর কত দিন’, ‘শেষ বিকেলের মেয়ে’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘আরেক ফাল্গুন’, ‘কয়েকটি মৃত্যু’, ‘তৃষ্ণা’, ‘সূর্যগ্রহণ’ ইত্যাদি। সংগ্রামমুখর নাগরিক জীবন, আবহমান বাংলার জনজীবন, মধ্যবিত্তের আশা-আকাঙক্ষা-বেদনা প্রভৃতি তাঁর রচনায় শিল্পরূপ পেয়েছে। সাহিত্যকৃতীর স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে আদমজি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর) দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জহির রায়হানের ভূমিকা ছিল সুদৃঢ় ও সাহসী। যুদ্ধ শেষে আলবদর, আলশামস বাহিনির হাতে ধৃত অগ্রজ শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে জহির রায়হান ১৯৭২ সালের ৩০ শে জানুয়ারি নিখোঁজ হন। তাঁর আর সন্ধান মেলেনি।
খুলনা গেজেট/এআইএন