পরিসংখ্যান বা মাঠের পারফরম্যান্স, সবদিক থেকেই জিম্বাবুয়ের চেয়ে ঢের এগিয়ে বাংলাদেশ। দুই দলের ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পরিষ্কার ফেভারিট অধিনায়ক তামিম ইকবালের দল। পঞ্চাশ ওভারের ফরম্যাটের লড়াইয়ে জিম্বাবুয়ে স্বগতিক হলেও প্রতিপক্ষকে ধবল ধোলাইয়ের স্বাদ দেওয়ার মিশনে মাঠে নামবে সফরকারীরা। তার আগে তামিম জানিয়েছেন, প্রথম ওয়ানডেটা গুরুত্বপূর্ণ লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের কাছে।
জিম্বাবুয়ে বিপক্ষে বাংলাদেশের ওয়ানডে ৩টি; ১৬, ১৮ ও ২০ জুলাই। আজ (শুক্রবার) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অর্থাৎ বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় প্রথম ওয়ানডেতে মুখোমুখি হবে দুই দল। জিম্বাবুয়ের হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে হতে যাওয়া ম্যাচটি বাংলাদেশ থেকে ম্যচটি দেখা যাবে গাজী টেলিভিশন ও টি-স্পোর্টসে। অনলাইনে সরাসরি সম্প্রচার করবে র্যাবিটহোল বিডি।
চোট জর্জর বাংলাদেশ দল প্রথম ম্যাচে সেরা একাদশ পাচ্ছে না। পারিবারিক কারণে সফরের মাঝপথে দেশে ফিরে আসায় উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিমকে ওয়ানডের পাশাপাশি পাওয়া যাবে না টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে পায়ের গোড়ালিতে চোট পাওয়ায় এ ম্যাচে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের খেলা অনিশ্চিত। হাঁটুর ব্যথায় ভুগলেও সিরিজটি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ হওয়ায় তামিম ইকবাল ঝুঁকি নিয়েও খেলবেন।
মুশফিকের অনুপস্থিতিতে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব সামলাবেন লিটন দাস। ওপেনিং থেকে নেমে চার নম্বরে ব্যাট করতে পারেন তিনি। তিনে যথারীতি সাকিব আল হাসান। তার আগে তামিমের সঙ্গে ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে দেখা যেতে পারে নাঈম শেখকে। মুস্তাফিজ না থাকায় একাদশে সুযোগ পেতে যাচ্ছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। তার সঙ্গে পেস বিভাগে দায়িত্ব সামলাবেন তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
স্পিনে সাকিব-মিরাজদের সাহায্য করবেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর আফিফ হোসেন ধ্রুব। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ থাকায় একাদশে স্পিনারের সংখ্যা ৫ জন দেখা যেতে পারে।
প্রথম ম্যাচের একাদশ সম্পর্কে তামিম বলেন, ‘আমরা সবসময় পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে খেলতে পারি এমন নয়। আর আমাদের পরিস্থিতি মেনে নিতে হবে। মুশফিকের পরিস্থিতি দেখুন, বা মুস্তাফিজের চোট। এগুলো নিয়ন্ত্রণে নেই। এজন্যই ১৬-১৭ জন রাখা হয় স্কোয়াডে। যারা স্কোয়াডে আছে সবাই যোগ্য।’
এদিকে সিরিজ শুরুর আগের দিন ওয়ানডে স্কোয়াড ঘোষণা করেছে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ড। যেখানে জিম্বাবুয়ের নিয়মিত অধিনায়ক শন উইলিয়ামস ও ক্রেইগ আরভিন করোনায় সৃষ্ট জটিলতায় টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজেও অনুপস্থিত থাকবেন।
ওয়ানডে সুপার লিগ-
শক্তিমত্তা বা পরিসংখ্যানের বিচারে বাংলাদেশ দল জিম্বাবুয়ের থেকে বেশ এগিয়ে থাকলেও এই সিরিজে ছেড়ে কথা বলতে চাইবে না কেউই। এটি ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ হওয়ায় সিরিজের ৩০ পয়েন্টে চোখ থাকবে দুই দলের। সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে শক্ত অবস্থানে আছে বাংলাদেশ দল। আগের তিন সিরিজে ৯ ম্যাচে ৫ জয় ৫০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে টাইগাররা।
এদিকে তিন ম্যাচে মাত্র ১ জয়ে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের প্রতিযোগিতার ১৩ দলের মধ্যে সবার নিচে অবস্থান জিম্বাবুয়ের। এই সিরিজে এগিয়ে যেতে চাইবে তারাও।
ওয়ানডে সুপার লিগ নিয়ে সিরিজ শুরুর আগে বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল জানান, ‘আমার মনে হয় না বড় কিছু করা দরকার। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হলে অনেক কিছু করা যায়। কিন্তু সুপার লিগ খেলছেন, প্রত্যেক ম্যাচের আলাদা গুরুত্ব আছে। তিনটা ম্যাচেই আমরা সেরা দল খেলানোর চেষ্টা করব।’
পরিসংখ্যান-
পরিসংখ্যা বা রেকর্ড বই, কথা বলছে বাংলাদেশের হয়ে। ১৯৯৭ সাল থেকে এযাবৎ ৭৫টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। যেখানে জিম্বাবুয়ের ২৮ জয়ের বিপরিতে ৪৭ জয় বাংলাদেশের। যদিও শুরুর দিকে জিম্বাবুয়ে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। মুখোমুখি দেখায় প্রথম ১০ ম্যাচেই জয় জিম্বাবুইয়ানদের। বর্তমান অবশ্য দৃশ্যপট বদলেছে। শেষ ১৬ ম্যাচের সবগুলোতে জয় টাইগারদের। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশদল জিম্বাবুয়ে কাছে সবশেষ হেরেছে ৮ বছর আগে, ২০১৩ সালে।
সেবার সবশেষ জিম্বাবুয়ে সফর করেছিল বাংলাদেশ দল। এরপর ৮ বছরে আর আফ্রিকার দেশটিতে ক্রিকেট খেলতে যায়নি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই ৮ বছরে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার আগের হিসাব বলছে, জিম্বাবুয়েতে ওয়ানডে ফরম্যাটে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে ২৮ ম্যাচে। যেখানে ১৫ হারের বিপরিতে জয় ১৩ ম্যাচে।
হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে হবে সিরিজের তিনটি ম্যাচই। এই মাঠে বাংলাদেশ দলের জয়ের থেকে হারের পরিসংখ্যানই সমৃদ্ধ। যেখানে জিম্বাবুয়ের জয় ১১টিতে, সেখানে বাংলাদেশ জিতেছে বাকি ৬ ম্যাচে।
দুই দলের দ্বিপাক্ষিক সিরিজের হিসেব কষলে অবশ্য এগিয়ে বাংলাদেশ। দেশ ও দেশের বাইরে ১৭টি সিরিজে অংশ নিয়েছে দুই দল। যেখানে ১১টি জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের জয় বাকি ৬ সিরিজে।
পরিসংখ্যানে অবশ্য চোখ রাখছেন না তামিম, ‘আশাবাদী সিরিজ জিতব। কালকের প্রথম ম্যাচই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমি তো চাইব প্রত্যেক ম্যাচই জিততে। কিন্তু দিন শেষে এটা ক্রিকেট।’
পরিশেষে ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট হোক বা পরিসংখ্যান, প্রাপ্তির খাতা আরও সমৃদ্ধ করতে চাইবে বাংলাদেশ দল। মাঠের লড়াইয়ে ছেড়ে কথা বলবে না জিম্বাবুয়েও।
প্রথম ওয়ানডের জন্য দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ-
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, আফিফ হোসেন ধ্রুব, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
জিম্বাবুয়ে: তিনাশে কামুনহুকামওয়ে, তাদিওয়ানাশে মারুমানি, ওয়েসলে মাধেভেরে, ডিওন মায়ার্স, ব্রেন্ডন টেলর (অধিনায়ক), সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্ল, রিগার্স চাকাভা (উইকেটরক্ষক) ডোনাল্ড টিরিপানো, ব্লেসিং মুজারাবানি ও টেন্ডাই চাতারা।
খুলনা গেজেট/ টি আই