করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে পরীক্ষা না নিয়ে দুই পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল তৈরিতে ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করায় ওই দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাননি। আর জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবারের মূল্যায়নের ফলাফলে ১৭ হাজার ৪৩ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
করোনাভাইরাস মহামারীকালে পরীক্ষা ছাড়াই আগের দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের মূল্যায়নে সবাইকে পাস করিয়ে শনিবার ফল প্রকাশ হয়। এতে জিপিএ-৫ পেয়েছে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।
ফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি জানান, গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করায় জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ পায়নি।
তিনি বলেন, “সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। যখন ম্যাপিং করা হয়েছে, তখন জিপিএ-৫ এর জন্য যে নম্বর দরকার ছিল, তা তারা পাননি। আবার বিষয়ভিত্তিক ম্যাপিং করায় অনেকে আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবার সেটি অর্জন করেছেন।
জিপিএ-৫ না পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেশি। জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবারের ফলাফলে ১৭ হাজার ৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি জানান, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ৩৭১ জন, ২০১৮ সালে ৫২ হাজার ৬৩৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পাননি।
জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও ২০১৭ সালে ৬ হাজার ৯৭৬ জন, ২০১৮ সালে ৪ হাজার ১৫৭ জন এবং ২০১৯ সালে ৮ হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল বলেও জানান তিনি।
যেভাবে হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাপিং
মহামারীকালে পরীক্ষা ছাড়াই আগের পরীক্ষার ভিত্তিতে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল তৈরিতে সাবজেক্ট ম্যাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। কীভাবে এই সাবজেক্ট ম্যাপিং করা হয়েছে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তা জানিয়েছেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটিও এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিয়েছে।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে গতবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনা করে এইচএসসিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগ
বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
এই বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসি এর ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগ
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জানিয়েছে।
জিপিএ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর জানান, আগের দুই পরীক্ষায় যারা চতুর্থ বিষয়ের জিপিএ মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তাদের কেউ কেউ এবার পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ফলে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাননি।
খুলনা গেজেট/এনএম