কোনো লড়াই ছাড়াই আফগানিস্তানের জালালাবাদ দখল করেছে তালেবানরা। সেখানে ‘তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন গভর্নর’। এ দাবি করেছেন একজন সরকারি কর্মকর্তা। রাজধানী কাবুলকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে ফেলেছে তালেবানরা। এ অবস্থায রাজধানী ছেড়ে পালাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। জালালাবাদ পূর্বাঞ্চলীয় নাঙ্গারহার প্রদেশের রাজধানী। গুরুত্বপূর্ণ এই শহর আজ রোববার সকালে তালেবানদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।
এর আগে উত্তরাঞ্চলীয় শহর মাজারে শরিফ দখল করে তালেবানরা। শুধু দখল করেই তারা চুপ করে থাকেনি। জালালাবাদে গভর্নরের অফিসে তারা অবস্থান নিয়েছে এমন ছবি প্রকাশ করেছে অনলাইনে। এই প্রদেশের পার্লামেন্ট সদস্য আবরারুল্লাহ মুরাদ বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, প্রবীণরা জালালাবাদে সরকারের পতন নিয়ে সমঝোতা করার পর এর নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তালেবানদের হাতে। এই শহরের আরেকজন আফগান কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, তালেবানদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন গভর্নর। তাই সেখানে কোনোই সংঘর্ষ হয়নি। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, বেসামরিক জনগণের জীবন রক্ষার একমাত্র উপায় ছিল আপসে তালেবানদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া।
জালালাবাদের অধিবাসী আহমেদ ওয়ালি বার্তা সংস্থা এএফপি’কে বলেছেন, ঘুম থেকে জেগেই তিনি দেখতে পান পুরো শহরে তালেবানের সাদা পতাকা। তারা কোনো লড়াই ছাড়াই এ শহরে প্রবেশ করেছে। এ শহরটির পতনের খবর নিশ্চিত করেছেন পশ্চিমা নিরাপত্তা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে কানেকশন বা সংযুক্তি বজায় রাখে এমন সব সড়কের নিয়ন্ত্রণ তালেবানদের হাতে।
আল জাজিরা আরো লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন বিদেশি সেনাদের প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে কিছুদিন আগে। এরপর গত কয়েক সপ্তাহে সারাদেশে তালেবানরা ছড়িয়ে পড়ে। তাদের প্রচারণা, দখলদারিত্ব বিদ্যুতবেগে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এর ফলে আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দৃশ্যত ধসে পড়েছে। আর তা দেখে হতাশা প্রকাশ করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এমন অবস্থায় আফগানিস্তান থেকে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপদে পর্যায়ক্রমে উদ্ধারে ৫ হাজার সেনা মোতায়োনের অনুমোদন দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেুসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিষয়ক একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এই সেনাদের মধ্যে থাকবে ৮২তম এয়ারবর্ন ডিভিশনের ১০০০ সেনা সদস্য।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গণি পন্থি মাজারে শরিফ শহরে শনিবার প্রবেশ করে তালেবানরা। কার্যত এখানেও লড়াই ছাড়া তারা দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। তালেবানদের উপস্থিতিতে ওই এলাকায় মোতায়েন করা সেনা সদস্যরা পালিয়ে মহাসড়ক দিয়ে প্রতিবেশি উজবেকিস্তানের দিকে চলে গেছেন। প্রাদেশিক কর্মকর্তারা এ তথ্য দিয়েছেন। যাচাই করা হয়নি এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
তাতে দেখা যায়, আফগান সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান এবং পোশাক পরা সেনারা আফগানিস্তানের হাইরাতান শহর এবং উজবেস্তিানের মধ্যে আয়রন ব্রিজে ভিড় করছেন। সেখানে সরকারকে সমর্থন করছিলেন প্রভাবশালী দু’জন স্থানীয় নেতা- আতা মোহাম্মদ নূর এবং আবদুল রশিদ দোস্তাম। তারাও ওই শহর ছেড়ে পালিয়েছেন। আগা মোহাম্মদ নূর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলেছেন, ষড়যন্ত্রের ফলে বলখ প্রদেশের দখল চলে গেছে তালেবানদের হাতে। এই প্রদেশেই মাজারে শরিফ অবস্থিত।
শনিবার দিনশেষে তালেবানরা একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, তালেবানরা দ্রুততার সঙ্গে যে অর্জন করছেন, সেটা এই বিষয়ই প্রমাণ করে যে- আফগান জনগণের কাছে তাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু। এ সময় আফগান জনগণ এবং বিদেশিদের নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, তারা নিরাপদ থাকবেন। এতে আরো বলা হয়, ইসলামিক এমিরেট (তালেবান) সব সময়ই তাদের জীবন, সম্পদ, সম্মান সুরক্ষিত রাখবে। প্রিয় দেশবাসির জন্য সৃষ্টি করবে একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশ। এতে আরো নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, কূটনীতিক এবং ত্রাণকর্মীদের কোনোই সমস্যা হবে না।
খুলনা গেজেট/এনএম