বাগেরহাটের শরণখোলায় সুন্দরবনে ৭০ টি বাঘ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যা ও পাচারকারী চক্রের হোতা হাবিব তালুকদার (৫০) ওরফে বাঘ হাবিব জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছে। হাবিব বাড়ি ফেরায় উৎকণ্ঠা বেড়েছে টাইগার টিমসহ বন সুরক্ষা কমিটির সদস্যদের মাঝে। হাবিব আবারও বনে প্রবেশ করে বাঘসহ বন্যপ্রাণী শিকারে লিপ্ত হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা রয়েছে।
সুন্দরবনে নিয়মিত বাঘ, হরিন, কুমির সহ বন্যপ্রাণী শিকারের কারণে স্থানীয়দের কাছে তিনি বাঘ হাবিব নামেই পরিচিত। হাবিব উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন সোনাতলা গ্রামের এক সময়ের দুর্ধর্ষ বনদস্যু বাদল পেয়াদার প্রধান সহযোগী কদম আলী তালুকদারের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী নিধন আইনে বনবিভাগের দায়ের করা আটটি মামলা রয়েছে।
সুন্দরবন সুরক্ষায় নিয়োজিত কমিউনিটি পেট্রোালিং গ্রুপের (সিপিজি) সদস্যরা জানান, হাবিবের পরিবারের অনেকেই সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী হত্যার সঙ্গে জড়িত। সে অনেক বছর ধরে বাঘ, হরিণ ও কুমির শিকার করে আসছে। তাছাড়া, ৭০টি বাঘ শিকার এবং বন্যপ্রাণীর চামড়া, মাংস ও কঙ্কাল বিক্রি করা হাবিবের একার কাজ নয়। এর পিছনে অর্থ যোগানদাতা সহ গডফাদার রয়েছে। এসব গডফাদারদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে জানতে চাইলে বন্যপ্রাণী শিকারী চক্রের হোতা বাঘ হাবিব বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ৭০ বাঘ হত্যার অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক। একটি মহল আমাকে ফাঁসানোর জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক সমাজ সেবক বলেন, সুন্দবনে বন্যপ্রাণী নিধন চক্রের হোতারা সব সময় ধরা ছোয়ার বাইরে। মাঝে মধ্যে দুএকজন চোরাকারবারী ধরা পড়লেও অদৃশ্য শক্তির ক্ষমতাবলে তারা জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে আসে এবং পূর্বের পেশায় ফিরে যায়।
শরণখোলা ষ্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আব্দুল মান্নান জানান, বাঘ শিকারি হাবিব বনবিভাগ ও পুলিশের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। তার বিরুদ্ধে বনবিভাগের দায়ের করা দুইটি বাঘের চামড়া ও ছয়টি হরিণের চামড়া পাচারের মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. সামসুল আরেফিন জানান, হাবিব তালুকদার ওরফে বাঘ হাবিব একজন বন্যপ্রাণী হত্যাকারী ও বন বিভাগের তালিকাভুক্ত আসামি। জেল থেকে ছাড়া পেলেও তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বেলায়েত হোসেন জানান, বাঘ হত্যাকারী হাবিবের জামিনের বিষয়টি ও এলাকায় ফিরে আসা আমাদের শঙ্কিত করেছে। তার ব্যাপারে বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের নজরদারী বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনে বাঘ সহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী হত্যায় অভিযুক্ত বাঘ হাবিবকে ২০২১ সালের ২৮ মে রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার মধ্য সোনাতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়। সাত মাস জেল খেটে সম্প্রতি তিনি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
খুলনা গেজেট/ এস আই