গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রামের বিলে জলাবদ্ধতার কারণে জমিতে ইরি-বোরো চাষ করতে পারছেন না কৃষকেরা। এতে প্রায় এক হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এ নিয়ে সহস্রাধিক কৃষক দুশ্চিন্তা ও হতাশায় ভুগছেন। জলাবদ্ধতা নিরসনের ব্যাপারে ওই এলাকার কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
কাশিয়ানী উপজেলার সিংগা গ্রাম মূলত নিম্নাঞ্চল হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে বিলের অধিকাংশ জমি জলমগ্ন থাকে। একমাত্র ফসল হিসেবে ইরি-বোরো মৌসুমে ধান চাষের উপরই নির্ভরশীল থাকতে হয় এ অঞ্চলের কৃষকদের। কিন্তু ওই বিলে কোন খাল না থাকায় ইরি-বোরো মৌসুমেও জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বিলের পানি ইরি-বোরো মৌসুমেও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ফলে জমিতে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও হাঁটুর উপরে পানি জমে থোকে। যে কারণে প্রায় এক হাজার একর জমি অনাবাদি থেকে যায় প্রতি বছর।
চলতি বোরো মৌসুমে ভাংগা দমদম, সিংগা, জগৎপট্টি, যদুপুর মৌজার প্রায় এক হাজার একর জমিতে সময় মত ধান রোপণ করতে পারছেন না কৃষক। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকেরা তাদের নিজ নিজ জমির কিছু অংশে ধান রোপণ করতে না পারায় পতিত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে ইরি-বোরো চাষে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষক।
সিংগা গ্রামের কৃষক কালিপদ বিশ্বাস, বৌদ্যনাথ বিশ্বাস ও বিবেক সরকার বলেন, আমাদের এই বিলে পানি নিস্কাশনের কোন খাল নেই। তাই পানি নিস্কাশন হয় না। বছরের এই একটি (শুষ্ক মৌসুম) সময় ধান চাষ করা যায়। ধান রোপণের সময় চলে যাচ্ছে অথচ আমরা জমি তৈরি করতেই পারছি না। জমিতে পানি বেশী থাকায় মৌসুমের শুরুতে তাই আমরা জমিতে ধান রোপণ করতে পারি না। আবার ধান পাকার সময় বর্ষার পানি এসে পাকা ধান তলিয়ে যাওয়ায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরা বিষয়টি ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষি বিভাগের কাছে জানিয়ে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেছি। আমাদের জমির পানি নামানোর ব্যবস্থা করে দিলেই আমরা খুশি। তাহলে আমরা তলিয়ে থাকা জমিতে ফসল ফলাতে পারবো।
সিংগা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রনব সরকার বলেন, এখনই বোরো চাষের উপযোগী সময়। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে অন্যান্য বিলের মতো সিংগা বিলের জমিতে কৃষকেরা বোরো চাষ করতে পারছেন না। সিংগা ইউনিয়নের দক্ষিণ পার্শ্বের বিলে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমি আছে।এই জমির পানি নিস্কাশনের জন্য একটি খালের দরকার। এখানে একটি খনন করে দিলে এই বিলের পানি নিষ্কাশন হবে।এই পানি নিস্কাশনের ব্যাবস্থা হলে এক হাজার একর জমি চাষের আওতায় আসবে এবং কৃষক তাদের জমিতে ফসল ফলিয়ে স্বাচ্ছন্দে জীবিন যাপন করতে পাবে।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, গোপালগঞ্জ জেলা মূলত নিম্নাঞ্চল। তাই সিংগা বিলের পানি নিস্কাশিত হয় না। এ বিলে পানি নিস্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি খাল খনন করলে এই জলাবদ্ধতা নিরসন হবে।সিংগা বিলে যাতে খাল কেটে কৃষকদের সমস্যার সমাধান করা হয় সে ব্যাপারে আমি সংশ্লিষ্ট দফতরে কথা বলবো।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফইজুর রহমান বলেন, সিংগা এলাকায় জলাবদ্ধতা যাতে নিরসন হয় সে ব্যাপারে আমরা চেষ্টা করবো।
খুলনা গেজেট/এনএম