আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যে উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের আগাম কথায় আশংকা বেড়েছে আওয়ামী লীগের গুপ্তবাহিনী নিজেরাই নিজেদের ‘নৌকা-লাঙ্গল-পাগল-ট্রাক-ঈগল’ প্রার্থীদেরকে হত্যা বা গুপ্তহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। সুতরাং জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। সজাগ থাকুন। সম্ভব হলে আওয়ামী অপকর্মের সাক্ষ্য প্রমাণ রেকর্ড করে রাখুন। বুধবার বিকালে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, গত ২৮শে অক্টোবর ঢাকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর মহাসমাবেশের আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের হুমকি দিয়ে বলেছিলো, ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পরিণতি শাপলা চত্বরের চেয়েও ভয়াবহ হবে। ওবায়দুল কাদের তার সেই অগণতান্ত্রিক এবং বেআইনী হুমকি কার্যকর করেছিলো পোষ্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপির শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশে গ্রেনেড বোমা হামলা চালিয়েছিলো। আওয়ামী অপশক্তি এখানেই থেমে থাকেনি। সুতরাং বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলোর আশংকা ভাগবাটোয়ারার নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে হানাহানি খুনোখুনি শেষ পর্যন্ত মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
‘ফলে পরিস্থিতি সামাল দিতে গণবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ ইচ্ছেকৃতভাবে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। ওবায়দুল কাদেরের আগাম কথায় আরো আশংকা বেড়েছে আওয়ামী লীগের গুপ্তবাহিনী নিজেরাই নিজেদের ‘নৌকা-লাঙ্গল-পাগল-ট্রাক-ঈগল’ প্রার্থীদেরকে হত্যা বা গুপ্তহত্যার পথও বেছে নিতে পারে। সুতরাং জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে। সজাগ থাকুন। সম্ভব হলে আওয়ামী অপকর্মের সাক্ষ্য প্রমাণ রেকর্ড করে রাখুন।’
তিনি বলেন, শুধু মাত্র বিনা ভোটে অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য গত ১৫ বছর ধরে অব্যাহতভাবে সংবিধান লংঘন করে চলেছেন। সংবিধানকে দুমড়ে মুচড়ে কাগজের নৌকা বানিয়েছেন। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ভোটাধিকার হরণ করে দেশের জনগণকে রিফিউজিতে পরিণত করেছেন। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর সংবিধানের ৭(ক)(২)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে দুই বার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে অভিযুক্ত। আগামী ৭ই জানুয়ারি তথাকথিত একদলীয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তিনি তৃতীয়বার রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ করতে যাচ্ছেন। তার দল ভারি করার জন্য উক্ত ৭(ক)(১)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সংবিধান লঙ্ঘনের উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্রের দায়ে সংশ্লিষ্ট কুশীলবরা বিশেষত প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনাররা , মন্ত্রিপরিষদ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, আইন, নির্বাচন কমিশন সচিব, সেনা প্রধান, পিএসও, পুলিশ প্রধান, ডিজি র্যাব, ডিজি বিজিবি, ডিজি আনসার, ডিজি এনএসআই, ডিজি ডিজিএফআই ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট এসপি-ডিসি ডিআইজি-বিভাগীয় কমিশনারসহ সবাই সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
রিজভী বলেন, সরকারি শীর্ষ পর্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদেয় অনবরত অবৈধ আদেশের ফলে সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা অবৈধ আদেশ পালনের দায়ে আজ অভিযুক্ত। এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি সকল চাকরিজীবীদের তার দুষ্কর্মের সহযোগী করে কঠিন শাস্তির খড়গের তলে নিয়ে আসা নিশ্চিত করে ফেলেছেন। সামনের দিনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে তার এই সকল সহযোগীদের। ১৮ ডিসেম্বর থেকে সভা-সমাবেশের উপর নিষেধাজ্ঞার আদেশ দানের মাধ্যমে মূলত অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারীর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যা সংবিধানের ৩৭/৩৮/৩৯ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সুতরাং প্রজাতন্ত্রের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বলবো- অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর অবৈধ আদেশ পালন থেকে আপনারা বিরত থাকুন। আপনারা একজন একনায়কের অবৈধ ক্ষমতা লিপ্সা চরিতার্থ করার সহযোগী হয়ে ১৮ কোটি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়াবেন না। আগামী ৭ই জানুয়ারীর পুর্বনির্ধারিত ফলাফলের পাতানো নির্বাচনে কোন সহযোগিতা করবেন না।
তিনি আরো বলেন, ৭ই জানুয়ারি কিশোরী ফেলানীর নারকীয় হত্যা দিবস। ৭ই জানুয়ারির ঐতিহাসিক রক্তাক্ত শোক দিবসে কোন নির্বাচন দেশপ্রেমিক জনগণ হতে দিবে না। মুক্তিকামী দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষের কাছে আমাদের আহ্বান-আগামী ৭ই জানুয়ারি আপনার-আমার প্রিয়তম বোন ফেলানী হত্যা দিবসে তাকে স্মরণ করে স্বাধীনতা রক্ষার অঙ্গীকারে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রত্যয়ে নির্বাচন বর্জন করুন।
খুলনা গেজেট/ টিএ