বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের এই দিনে বাংলাদেশ তথা পুরো ঢাকা শহরের যে অবস্থা সেটা কারো কাছে প্রত্যাশিত নয়। সারা শহর একটা অঘোষিত কারফিউর মতো রয়েছে। জনগণের চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জনগণকে বাদ দিয়ে দিনটি সরকার আজ উদযাপন করছে। বিএনপি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য যে কমিটি ছিল সে কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের অনেক কর্মসূচি ছিল। কিন্তু সেটা আমরা পালন করতে পারেনি। আমরা আজকে স্মৃতিসৌধেও যেতে পারিনি।
শুক্রবার সকাল সাড়ে এগারোটায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত শেষে এসব কথা বলেন তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনার কারণে আমাদের বাইরের যে কর্মসূচিগুলো ছিল ওইগুলো আমরা বাতিল করেছি। করোনা অত্যন্ত আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশ আক্রমণ শুরু করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, এ বিষয়ে সরকার একেবারে উদাসীন। কারণ তারা বিদেশী মেহমানদের নিয়ে ব্যস্ত। দেশের মানুষের কি হবে না হবে এ নিয়ে তাদের খুব বেশি আগ্রহ আমরা দেখছি না।
ফখরুল বলেন, এখানে উপস্থিত আমরা সবাই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও দেশের এই অবস্থা দেখতে হবে আমরা সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, এই দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে অখ- রাখা, সুসংহত করা এবং গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য সবাইকে আত্মত্যাগ করতে হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর থেকে কি প্রত্যাশা করছে বিএনপি এমন প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারত আমাদের বন্ধু দেশ এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় তারা আমাদেরকে সহযোগিতা করেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বন্ধুদের সঙ্গে আমাদের যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো রয়েছে বিশেষ করে যে পানির হিস্যা সেখানে কোনো সমাধান হয়নি। বারবার করে বলা হচ্ছে তিস্তা নদীর পানির কথা কিন্তু সেটা ১০ বছর আগে বলা হলেও এই সমস্যার সমাধান এখনো হয়নি। সরকার একতরফাভাবে ফেনী নদীর পানি দিয়ে দিয়েছি।
তিনি বলেন, আজকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। পৃথিবীর এমন কোন সীমান্তে এরকম হত্যা হয় এমন ঘটনা আছে কিনা আমার জানা নেই। প্রতি বছর প্রায় ২০০ মানুষকে হত্যা করা হয় সীমান্তে। এটা কিভাবে জাস্টিফাই করা হয় আমি সেটা জানি না। কিছুদিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এসে বলেছেন নো ক্রাইম, নো ডেথ। ক্রাইম করলে এর ট্রায়াল হতে হবে তো। তারা যদি দোষী হয় সে সংবিধান অনুযায়ী তাদের শাস্তি হবে।
ফখরুল বলেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের যে কানেক্টিভিটি হচ্ছে এতে খুব আনন্দিত আমরা। এই কানেক্টিভিটিতে আমাদের কি লাভ হচ্ছে? এই বিষয়টা এখন পর্যন্ত জনগণকে জানানো হয়নি। আমরা সকল দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। কিন্তু কেউ আমাদের প্রভূ হোক সেটা আমরা কখনোই চাইনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির বিএনপির সঙ্গে কোন সাক্ষাৎ এর সময়সূচি নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে এদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। তার ঘোষণায় অনুপ্রাণিত হয়ে সে সময়ের জনগণ মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে জনগণের যযে আশা আখাঙ্ক্ষা ছিল সেই আশা আকাক্সক্ষা পূর্ণ হয়নি।
ফখরুল বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও বাংলাদেশের অবৈধ দখলদার সরকারের হাতে তিনি বন্দি রয়েছেন। আমাদের এই স্বাধীনতার অর্জন এটাই যে, আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও স্বাধীন হইনি। আমরা নিজেদের স্বাধীন বলতে পারিনা। এদেশের মানুষের স্বাধীনতা বিপন্ন হয়েছে। আমরা শৃঙ্খল মুক্ত হওয়ার জন্য সংগ্রাম করছি। আজকের এই দিন আমরা শপথ নিয়েছি আমরা এই দেশকে শৃংখল মুক্ত করব। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্ত করবো। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এনএম