বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, হাজারও শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈধতার কোনো সংকট নেই। নৈতিকভাবে সরকারের পরিকল্পনা জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিকদলগুলোকে অন্ধকারে রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হয় না।
রোববার (২৫ মে) ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বাংলাদেশের (এনপিপি) প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এ কথা বলেন। এনপিপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির সভাপতি ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনয়াতনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, দেশ-বিদেশে দক্ষ এবং যোগ্য অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে জনগণ অবিলম্বে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেখতে পাবে— এই প্রত্যাশা করছি।
অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাক্ষাতের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো দেখা করে নির্বাচনের কথা বলেছে। নির্বাচনের জন্য সুস্পষ্ট তারিখ-দিনক্ষণ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। বিএনপির দাবি আগামী ডিসেম্বরে ভেতরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনপ্রশাসন, আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর প্রয়োজনী সংস্কারের জন্য বিএনপিসহ আমরা যারা রাজপথে একসঙ্গে আন্দোলন করেছি তাদের সর্বাত্মক সমর্থন অব্যাহত রেখেছি।
তারেক রহমান বলেন, পতিত পরাজিত স্বৈরাচার সরকারের আমলে গণতন্ত্র, রাষ্ট্র এবং রাজনীতিতে নানা রকম ষড়যন্ত্র সবাইকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এনপিপিও সেই তালিকা থেকে বাদ যায়নি। দীর্ঘ দেড় দশকের বেশি সময় জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ফ্যাসিবাদী শাসন ও শোষণমুক্ত পারিবেশে আজ আপনারা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছেন। পতিত পরাজিত বিতাড়িত ফ্যাসিবাদ যাতে আর কোনো রূপে কোনো ক্রমে ফিরতে না পারে, কোনো ক্রমে আবার আগমন ঘটতে পারে এই সময়ে সেটাই হোক বাংলাদেশে প্রত্যেকটি গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ করে রাষ্ট্র এবং রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনে দরকার প্রয়োজনী সংস্কার।
সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ তারেক রহমান বলেন, অল্প কিংবা বেশি সংস্কার এমন কিছু নেই। রাষ্ট্র ও রাজনীতির প্রযোজনে সংস্কার একটি চলমান ও ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। তবে আমার মনে হয় পুথিগত সংস্কারের চেয়ে প্রায়োগিক সংস্কার অনেক বেশি জরুরি।
তারেক রহমান বলেন, সংবিধানের ৬৫-এর ২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনের নামে প্রহসন চালিয়ে কথিত সংসদ গঠন করা হয়। সংবিধানে জনগণের সরাসরি ভোটে সংসদ গঠনের কথা বলা থাকলেও জনগণকে ভোট প্রয়োগের কোনোরূপ সুযোগ দেওয়া হয়নি। ফ্যাসিবাদ কায়েম করে সারা দেশের জনগণকে অসহায় এবং ক্ষমতাহীন করে রাখা হয়েছিল। এই কারণেই মনে করি, রাষ্ট্রে ফ্যাসিবাদ রুখে দিয়ে জনগণের ভোটের ক্ষমতায়নসহ নির্বাচিতদের নিয়ে সংসদ এবং সরকার গঠন করা হলে জনগণের কাছে জবাব দিতে বাধ্য। দেশের নাগরিকদের ক্ষমতা নিশ্চিত থাকলে ফ্যাসিবাদ কায়েম সম্ভব হয় না। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকার/ অন্তর্বর্তী সরকার কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যে নামেই সরকারের চরিত্র হোক। সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য না করা গেলে হয়তো নিজেদের অজান্তেই সরকার স্বৈরাচার হয়ে ওঠে। সেই কারণে নাগরিকদের সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা জারি রাখতে হবে।
তারেক রহমান আরও বলেন, দেশের জনগণ সরকারের করুণারপাত্র নন। সরকার জনগণের ন্যায্য দাবি মানতে বাধ্য। এখানে সরকারের মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগের কোনো সুযোগ নেই। হাজারও শহীদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই সরকারের নৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈধতার কোনো সংকট নেই। অবশ্য এই সরকার জনগণের কাছে জবাদিহিমূলক সরকার নয়। নৈতিকভাবে সরকারের পরিকল্পনা জনগণের কাছে স্পষ্ট থাকা প্রয়োজন। জনগণকে অন্ধকারে রেখে, রাজনৈতিকদলগুলোকে অন্ধকারে রেখে শেষ পর্যন্ত কোনো পরিকল্পনাই টেকসই হয় না, হবেও না।
তারেক রহমান বলেন, জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের মতো অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে জনগণ এমনটা আশা করে না। তারপরও সরকারকে নিয়ম মাফিক কিছু কাজ করতে হয়। নিয়ম মাফিক সরকারকে চলতি অর্থ বছরের বাজেট ঘোষণা করতে হবে। অতীত অভিজ্ঞতা দেখা গেছে। প্রতিটি বছর ঘাটতি বাজেট প্রতিবন্ধকতা। বাজেট প্রণয়নে এনবিআরের সরাসরি কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু রাজস্ব আদায় করে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের ভূমিকা মুখ্য। এমন বাস্তবতায় বাজেটের আগমুহূর্তে এনবিআরের সংস্কার চাপিয়ে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার যে অচলাবস্থা সৃষ্টি করছে- এটা আমাদের অর্থনীতির জন্য খুব ভালো বিষয় নয়। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য জবাবিদিহিমূলক সরকার সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে বলে বিশ্বাস করে গণতন্ত্রকামী জনগণ।
তারেক রহমান আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের যোগ্যতা-অযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নয়, দেশে নির্বাচিত সরকার না থাকায় বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে এসেছে। এক অনিশ্চিয়তার অর্থনীতি, রাজনীতি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে প্রায় প্রতিদিন। এই জন্য জনগণ প্রতিদিন বিভিন্ন দাবি-দাবা নিয়ে রাজপথে নেমে আসছে। যদিও এই মুহূর্তে জনগণের দাবি-দাবা শোনার কেউ নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যেকোনো অজুহাত এবং গড়িমসি করে পতিত পলাতক স্বৈরাচার মাথাচারা দিয়ে উঠার অপেক্ষায় রয়েছে, আজকে বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে তা উঠে এসেছে। তবে ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় এ পথ রুদ্ধ করাও সম্ভব।
ফ্যাসিবাদ রুখে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিগত ৫ আগস্টের মতো এখনও ঐক্যবদ্ধ আছে বলে মন্তব্য করেন তারেক রহমান।
খুলনা গেজেট/এএজে