লিওনেল মেসিকে দলে পাওয়া, এর আগে সার্জিও রামোস, ইউরোসেরা গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি ডনারুমাকে ভেড়ানো। সব মিলিয়ে পিএসজির দলটাকে নিয়ে ঈর্ষান্বিত হওয়া ছাড়া উপায়ই ছিল না। তবে ছয় মাস না ঘুরতেই এখন সংবাদ মাধ্যমে বাজছে ভিন্ন সুর। দলে শুরু হয়েছে কোন্দল, যার ফলে ভাঙনের সুর দলটির ড্রেসিং রুমে।
প্যারিসিয়ান দলটি যে এবারই বড় তারকাকে দলে ভিড়িয়েছে, বিষয়টি মোটেও তেমন নয়। এই ক্লাবে খেলে গেছেন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ, ডেভিড বেকহ্যামের মতো খেলোয়াড়। এরপর আনহেল ডি মারিয়া, নেইমার, কিলিয়ান এমবাপেদের আগমন ঘটেছে এই দলে। তবে এরপরও দলটি ছিল একটা ‘পরিবারের’ মতোই। তবে তাতেই এবার শোনা যাচ্ছে ভাঙনের সুর। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, নানা কোন্দলে জর্জরিত পিএসজি।
মেসি, নেইমার, এমবাপে, ডি মারিয়াদের দলে একসঙ্গে কোচ মরিসিও পচেত্তিনো খেলাবেন কোন কৌশলে তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ ছিল না। তবে আর্জেন্টাইন এই কোচ অবশ্য জানিয়েছিলেন, তার আগেই খেলোয়াড়দের সামলানোর বড় কাজটা সারতে হবে তাকে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম লেকিপে জানাচ্ছে, সেটাই করতে পারেননি পচেত্তিনো। গতকাল মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে তাই প্রকাশ করেছে পত্রিকাটি। যেখানে উঠে এসেছে খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত কোন্দল দলের ড্রেসিং রুমের ঐক্যেও ফাটল ধরিয়েছে বেশ।
দলে আগে থেকেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ী গোলরক্ষক কেইলর নাভাস ছিলেন। এরপর গেল দলবদল মৌসুমে পিএসজি দলে ভিড়িয়েছে জিয়ানলুইজি ডনারুমাকে। সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ গোলরক্ষক অবশ্য বিষয়টাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখেছিলেন। তবে ডনারুমার দৃষ্টিভঙ্গিটা তেমন নয় মোটেও।
পিএসজি কোচ তাদের ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানোর পথে হাঁটছেন এখন। যার ফলে তরুণ এই গোলরক্ষক ও তার এজেন্ট ভাবছেন, তার পাওনা গেমটাইম কাটা পড়ছে তাতে। এজেন্টরা জনসম্মুখেও আনছেন বিষয়টা, যা দলে সৃষ্টি করেছে অশান্তি।
লেকিপে জানাচ্ছে, ফরাসি এই খেলোয়ড়ের সঙ্গে দলের দক্ষিণ আমেরিকান তারকাদের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে। এমবাপের পিএসজিতে থাকার সম্ভাবনাটাও ফিকে হয়ে গেছে তাতে। দলের ড্রেসিংরুমে স্থিতি নেই, যার ফলে এমবাপে নতুন চুক্তিতে সই করতেও আগ্রহী নন আর, জানাচ্ছে ফরাসি সংবাদ মাধ্যমটি।
মেসি দলে আসায় ভূমিকা বদলে গেছে নেইমারের। সেটা মাঠে যেমন, মাঠের বাইরেও। সেই নতুন ভূমিকাতেই নাকি স্বচ্ছন্দ নন নেইমার।
সঙ্গে যোগ হয়েছে তার খামখেয়ালিপনা। ক্লাবের পৃষ্ঠপোষকদের সঙ্গে চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে ক্লাবের খেলোয়াড়দের থাকাটা বাধ্যতামূলক, কিন্তু নেইমারকে সেখানে দেখা যায়নি সম্প্রতি। যার ফলে তার প্রতি ক্লাবের বিতৃষ্ণা বাড়ছে ক্রমেই। এমনকি সর্বশেষ কর্মকাণ্ডে তার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথাও ভেবেছে কর্তৃপক্ষ।
প্যারিসিয়ান ক্লাবটির ড্রেসিং রুমের আরেক সমস্যা হচ্ছে ‘কিছু’ খেলোয়াড়ের প্রতি দলের একচোখা নীতি। সম্প্রতি ফরাসি সংবাদ মাধ্যমে খবর এসেছে, দুই দক্ষিণ আমেরিকান খেলোয়াড় অনুশীলনে এসেছিলেন আগের রাতে পার্টি করে, স্পষ্টত ক্লান্ত অবসন্ন চেহারা নিয়ে। কোচিং স্টাফের অনুমতি ছাড়া দুই জনই সেদিন অনুশীলনে নামতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন।
মেসি ব্যালন ডি’অর জয়ের পর একটা পুরো ক্লাবই ভাড়া করে ফেলেছিলেন। সেখানে তার অনেক সতীর্থই উপস্থিত ছিলেন। তবে পরেরদিন অনুশীলনে মেসি আর লিয়ান্দ্রো পারেদেস ছিলেন না গ্যাস্ট্রোএন্টারিটিসের সমস্যার কারণে। এ বিষয়টি ভালোভাবে মেনে নিতে পারেননি তার সতীর্থরা। চেয়েছিলেন কোচ পচেত্তিনো আর ব্যবস্থাপক লিওনার্দোর কড়া জবাবও। তবে তার কিছুই করেননি দু’জনে। এর ফলেই অসন্তোষের আগুনটা বাড়ছে ক্রমেই।
খুলনা গেজেট/ এস আই