নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দলের মেয়রপ্রার্থী ও ছোট ভাই মির্জা আবদুল কাদেরের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া দলে কেউ অপরিহার্য নয়। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যে কোনো সিদ্ধান্ত দলীয় সভাপতি নিতে পারেন।
ওবায়দুল কাদের বুধবার সকালে সরকারের টানা এক যুগ পূর্তি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি আয়োজিত শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে এ অনুষ্ঠানে ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
ছোট ভাইয়ের বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনার ঊর্ধ্বে কেউ নয়, দল করলে সবাইকে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। কোনো বিশেষ ক্ষেত্রে কাউকে কোনো ধরনের ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা সম্প্রতি নির্বাচন, রাজনীতি, আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের নিয়ে একাধিক বক্তব্য দিয়েছেন, যা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণাকালে আবদুল কাদের মির্জা বলেন– ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছু চামচা নেতা আছেন, যারা বলেন অমুক নেতা, তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটি আসন ছাড়া বাকি আসনে আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটিই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্য কথা বলছি।’
আবদুল কাদের মির্জার এ বক্তব্যের ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় দলীয় কিছু নেতাকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ‘নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটি সত্য। কিন্তু আপনাদের (নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা) জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও অনেক লোক জড়ো করতে পারব। না হয় রাজনীতি থেকে বিদায় নেব।’
১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে আবদুল কাদের মির্জা নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন।
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি আবদুল কাদের মির্জা তার বক্তৃতায় আরও বলেন, ‘নোয়াখালীর রাজনীতি অতিকষ্টের। এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, মওদুদ সাহেব (বিএনপির মওদুদ আহমদ), আবু নাছের সাহেব (জামায়াতের)—এই তিনজন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ, তাদের সমমর্যাদার কেউ নেই। কোনো নেতা সৃষ্টি হয়নি। এখন তো ওবায়দুল কাদের, মওদুদ আহমদের নাম বিক্রি করি। তারা তিনজন তো অসুস্থ, তারা মারা গেলে কার নাম বিক্রি করবেন, কেউ নাই।’
কারও নাম উল্লেখ না করে আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট যারা করেন, তারা হচ্ছেন নেতা। পুলিশের, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দিয়ে যারা পাঁচ লাখ টাকা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা। গরিব পিয়নের চাকরি দিয়ে তিন লাখ টাকা যারা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা।’ তার এই বক্তব্যের বিষয়ে আজ ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হয়।
২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটির অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/এনএম